পদ্মাসেতুর উপর দিয়ে ঢাকার সঙ্গে বরিশালের উন্নত সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করতে ফরিদপুর-কুয়াকাটা চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বাড়ছে।
তবে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে শেষ সংশোধিত প্রস্তাবে যে ২২৩ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর সুপারিশ ছিল, তা থেকে সরে এসে ২১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যাচ্ছে। এই সভা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভা।
২০১৮ সালে অনুমোদন পাওয়া ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্পে প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা।
বরিশাল-পটুায়াখালী বিদ্যমান সড়ক এড়িয়ে নতুন বাইপাস সড়কটি চার লেন করার পরিকল্পনায় বেশি ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। এজন্য আগেই ২২৩ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছিল। তবে এখন তা ২১৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এনেছে পরিকল্পনা কমিশন।
ফলে এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। অর্থাৎ প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ছে ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা বা ২১৬ শতাংশ।
গত ৮ আগস্ট বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে যৌক্তিক পর্যায়ে ব্যয় নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
প্রকল্পটির এই ব্যয় বৃদ্ধির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সভা ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিকল্পনা কমিশনের সকল বিভাগ মিলে ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প একনেক সভার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক অনুবিভাগে প্রেরণ করা হয়েছিল।
“কিন্তু উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকল্পগুলোর ব্যয় আরও যাচাই-বাচাইয়ের জন্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর কয়েকটি প্রকল্পের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আগামী বুধবার বর্তমান সরকারের প্রথম একনেক সভা আহ্বান করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই সভায় উপস্থাপনের জন্য ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পটি জমা পড়েছে।”
একনেক উইংয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রকল্পটিসহ আগামী বৈঠকের জন্য রবিবার পর্যন্ত ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ’ এবং ‘গাছবাড়িয়া কুচিয়ার মোড় (বীর মুক্তিযোদ্ধা) মুরিদুল আলমসড়ক উন্নয়ন’সহ ৮টি প্রকল্প জমা পড়েছে।
২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক একনেক সভায় ‘ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন প্রকল্পটি মাত্র ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের কথা ছিল।
দুই বছর মেয়াদের ওই প্রকল্পটি নির্ধারিত ভূমি অধিগ্রহণ শেষ করতে না পারায় ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো সংশোধন করে মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সাল পর্যন্ত করা হয়।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, মেয়াদ বাড়ানোর পরও প্রকল্পটি শেষ করতে না পারায় ভৌত অবকাঠামো বিভাগে প্রকল্পটি আবারও সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন প্রকল্পটির ব্যয় ২২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৫০ কোটি টাকা বাড়োনোর প্রস্তাব পাঠায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। আর ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব মূল্যায়ন করতে কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় তোলা হয়। যাচাই-বাচাই করে প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ১৫১ কোটি টাকা কমিয়ে ৫ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই প্রকল্পটি মূলত ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে প্রথমে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়ককেই চার লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই সড়কটি চার লেনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করতে গেলে বিপুল সংখ্যক বাড়িঘর, স্কুল-কলেজের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয়। এই উচ্ছেদ করতে গেলে প্রকল্পের ব্যয় আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
এরপর ২০২৩ সালের শুরুতে সংশোধন আনা প্রস্তাবে আগের সড়ক এড়িয়ে এই চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৫৫৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কথা বলা হয়। এর ফলে প্রকল্পটির জন্য এখন ৮৬০ দশমিক ৬২২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রথম প্রস্তাবে ৩০২ দশমিক ৭০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার, ভূমি, কৃষি এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে গত বছরের শুরুতে বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে বরিশাল শহর থেকে বাইপাস সড়ক তৈরির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী চার লেন করার উদ্যোগ নেওয়া এই মহাসড়কের দৈর্ঘ্য মূল প্রকল্পের ২৩৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে সংশোধনী প্রস্তাবে ২৩২ দশমিক ৪৬ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।