Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ভাইরাল হলো ভারতে দরিদ্র শিশুদের নিয়ে ফ্যাশন ফটো শুটের ভিডিও

Photoshoot with slum girls
[publishpress_authors_box]

দরিদ্র স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফ্যাশন শুটের ভিডিও হয়ে গেলো ভাইরাল। তারা এখন রীতিমতো সেলিব্রিটি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই ঘটনাটি ঘটেছে।   

ভাইরাল ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৭ বয়সী মেয়েরা লাল ও সোনালী রঙের পোশাক পরে ফটো শুটে অংশ নিয়েছে। পোশাকগুলো পুরনো বাতিল কাপড় থেকে তৈরি।

ফটো শুটে অংশ নেওয়া কিশোর-কিশোরীরা নিজেরাই পোশাকগুলো ডিজাইন এবং সেলাই করেছে। বস্তির মলিন দেওয়াল এবং ছাদকে ব্যাকড্রপ হিসেবে ব্যবহার করে আয়োজন করা হয় র‌্যাম্পে হাঁটার জন্য।

আর ভিডিওটি শুট এবং এডিট করেছে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর।

ভিডিওটিতে প্রথমে প্রকাশ হয় ভারতের লখনৌ শহরের বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশন ফর চেইঞ্জ এর ইন্সটাগ্রাম পেইজে।

এই উন্নয়ন সংস্থাটি শহরের বস্তি এলাকার প্রায় ৪০০ শিশুদের নিয়ে কাজ করে। তাদের বিনামূল্যে খাবার, শিক্ষা এবং বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণও প্রদান করে সংস্থাটি। ভিডিওতে দেখা যাওয়া শিশুরা এই এনজিও-র শিক্ষার্থী।

ফটো শুটে অংশ নেওয়া কিশোরী মেহক কান্নোজিয়া বিবিসিকে জানায়, তিনি এবং তার সহপাঠীরা ইন্সটাগ্রামে বলিউডের অভিনেত্রীদের পোশাকের স্টাইল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। সেই ফ্যাশন দেখে তারা নিজেরাও কিছু পোশাক বানিয়ে ফেলেছিল।

এ প্রসঙ্গে মেহেক জানান “এইবার আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের যা যা আছে তাই দিয়ে সবাই মিলে কাজ করবো।”

আর এই কাজের জন্য তারা ভারতের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির আইডিয়া বেছে নেয়। সব্যসাচী বলিউড সেলিব্রিটি, হলিউড অভিনেত্রী এবং বহু বিলিয়নারের পোশাক ডিজাইন করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি কিম কার্দাশিয়ান এর ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনে শুট- এর জন্য শাড়ির ডিজাইন করেছিলেন।

মেহেক জানায়, তাদের এই প্রকল্পের নাম ‘ইয়ে লাল রঙ’ (এই লাল রং)। ডিজাইনার সব্যসাচী মুখার্জির বিয়ের পোশাকের সংগ্রহ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই নাম দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

মেহেক বলেন, “মানুষের দানে পাওয়া কাপড়গুলো থেকে সব লাল পোশাক আলাদা করলাম। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম ঠিক কেমন পোশাক বানাতে চাই। তারপর সেগুলো নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।”

এ কাজে তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে সন্দেহ নেই।  তিন-চার দিনের মধ্যেই প্রায় এক ডজন পোশাক সেলাই করে তারা।  

তবে মেহেকের ভাষায়- কাজটি করার সময় তারা ‘খুব মজা করেছে’।

মেহেক জানায়, র‍্যাম্প ওয়াকের জন্য তারা সব্যসাচীর ভিডিওগুলোর মডেলদের মনোযোগ দিয়ে দেখেছে এবং তাদের হাঁটার স্টাইল অনুকরণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে মেহেক বলেন, “সব্যসাচীর মডেলদের মতোই আমরা অনেকেই সানগ্লাস পরেছি, কেউ আবার স্ট্র দিয়ে পানি পান খাচ্ছিল, আবার কেউ কাপড়ের একটি পুঁটলি বোগলদাবা করে হাঁটছিল।”

মেহেক আরও বলেন, শুটের সময় অনেক কিছুই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে গেছে।

“শুটের এক পর্যায়ে আমাকে হাসতে বলা হয়েছিল। ঠিক তখনই কেউ একটা মজার কথা বলল আর আমি হেসে উঠলাম।”

সাহসী এই উদ্যোগটি জয় করেছে ভারতের বহু মানুষের হৃদয়। সামান্য বাজেটে তৈরি এই ভিডিওটি সব্যসাচী মুখার্জি তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল থেকে শেয়ার করলে, এটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই উদ্যোগটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেয়েছে ব্যাপক প্রশংসা। অনেকেই একে পেশাদার ফ্যাশন ইভেন্টের সঙ্গে তুলনা করছেন।

ভিডিওটি ভাইরাল হবার পর সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সংস্থাটির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকে। দরিদ্র শিশুদের জন্য পরিচালিত তাদের স্কুলে পরিদর্শন করেছে বেশ কিছু টিভি চ্যানেল। শুটে অংশ নেওয়া কজন শিশুকে জনপ্রিয় এফএম রেডিও স্টেশনগুলো জানিয়েছে আমন্ত্রণ। এমনকি বলিউড অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়াও গেছেন ওই স্কুলে, শিশুদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন একটি স্কার্ফ।

সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটিই এখন মেহেকের কাছে ‘অপ্রত্যাশিত’ লাগছে।

এ বিষয়ে মেহেক বলে, “মনে হচ্ছে যেন স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। বন্ধুরা ভিডিওটি শেয়ার করছে আর বলছে  ‘তুমি তো বিখ্যাত হয়ে গেছো’।”

মেহেক আরও বলে, “অসাধারণ লাগছে। এখন শুধু সব্যসাচী-কে দেখাই বাকি।”

তবে সমালোচনারও শিকার হয়েছে এই ফটো শুটের ভিডিও। শিশুদের দিয়ে বিয়ের পোশাকে ফটো শুট ‘বাল্য বিয়েতে উৎসাহ দিতে পারে’ বলে সমালোচনাকারীরা দাবি করছেন । কার,ণ ভারত এমন একটি দেশ যেখানে কোটি কোটি মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যায়।

অবশ্য ইনোভেশন ফর চেইঞ্জ তাদের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এই সমালোচনার উত্তর দিয়ে বলেছে, তারা কোনোভাবেই বাল্য বিয়ের প্রচারণা চালানোর উদ্দেশ্যে এই কাজ করেনি।

“বাল্য বিয়ের প্রচারণা কখনোই আমাদের লক্ষ্য নয়। শুটে অংশ নেওয়া মেয়েগুলো এই ধরনের ধারণা এবং সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়ছে বলেই আজ এমন একটি কাজে অংশ নিতে পেরেছে। দয়া করে তাদের প্রশংসা করুন, না হলে তাদের মনোবল ভেঙে যাবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত