ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে হলটির সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনকে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন জালাল আহমেদ, মোহাম্মদ সুমন, ফিরোজ কবির, আবদুস সামাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, ওয়াজিবুল আলম, আহসান উল্লাহ, ফজলে রাব্বি, ইয়ামুজ জামান, রাশেদ কামাল অনিক, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান ও মো. সুলতান।
এরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম আক্তারুজ্জামানের আদালতে নিহত তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার এই মামলা করেন। এ নিয়ে তোফাজ্জল হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হলো।
প্রথম মামলাটি হয়েছিল গত ১৯ আগস্ট শাহবাগ থানায়। যার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছিল।
আদালত আসমা আক্তারের করা মামলাটি গ্রহণ করলেও আপাতত এর তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। প্রথম মামলার তদন্ত শেষ হলে এটি সচল হবে।
নতুন মামলার বাদীর আইনজীবী নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ঢাবির মামলায় কাউকে নির্দিষ্ট করে আসামি করা হয়নি। অথচ ভিডিওতে সবার চেহারা পরিষ্কার দেখা গেছে। এর পরও আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয়ে ব্যক্তিদের।
তিনি বলেন, “এ মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পাবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান। তাই নতুন করে আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কোনোভাবে দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করেন আইনজীবী।
বাদী বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা মানা যায় না। ঘটনায় দায়ীদের কঠিন সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
”এমন সাজা নিশ্চিত করতে হবে যাতে আর কেউ এভাবে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে না পারে।”
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়। সেদিন রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে ঘোরাফেরা করছিলেন তোফাজ্জল। সেসময় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। রাত ৮টার দিকে তোফাজ্জল হলে প্রবেশ করেন। তখন শিক্ষার্থীরা দুপুরে ৬টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে তাকে আটক করে মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। সেখানে ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে তাকে জেরা ও মারধর করতে থাকে।
এক পর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যান্টিনে খাওয়ানো হয়। খাওয়ানোর পর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করার এক পর্যায়ে তোফাজ্জল অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় রাত ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরদিন দুপুরে শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে অভিযুক্ত ৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ওই ৬ শিক্ষার্থী হলেন ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ , জিওগ্রাফির আল হসাইন সাজ্জাদ ও ওয়াজিবুল আলম।
২০ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই আমিনুল ইসলাম গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের আদালতে হাজির করেন। এরপর আসামিরা স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালত তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
২১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুমকে পরিবর্তন করে ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে হলটির নতুন প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।