Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

মূলধনী যন্ত্র আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ এফবিসিসিআইর

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এফবিসিসিআই।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরতে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এফবিসিসিআই।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

বাজেট নিয়ে খুব একটা সমালোচনা না থাকলেও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড় চেয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা বলছে, এক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভুল বার্তা দেবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট সংসদে প্রস্তাবের দুদিন পর শনিবার এফবিসিসিআই তাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসে।

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবারের বাজেট খুব একটা বড় করেননি মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এবারের বাজেট আগেরবারের চেয়ে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেটের এই আকার বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম।

তবে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা মোকাবেলার জন্য সুশাসন ও যথাযথ তদারকির দরকার রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবে আগামী অর্থবছরজুড়ে খরচের টাকা জোগাড়ের জন্য নতুন করে কিছু খাতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

এর মধ্যে আগামী অর্থবছর থেকে কিছু ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন তিনি।

এর বিরোিধতা করে এফবিসিসিআই বলছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রী আমদানিতে বিদ্যমান শূন্য শুল্ক আরও ৫-১০ বছর রাখা দরকার।

এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মাহবুবুল আলম বলেন, ফসলী জমি নষ্ট করে যেখানে-সেখানে যাতে শিল্পায়ন না হয়, সে জন্যই তো অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা গড়ে ওঠে। তাছাড়া বর্তমানে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে শিল্প-কারখানা গড়ে তুললে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ পাওয়া যায় না। এমন ক্ষেত্রে ঋণ না দেওয়ার নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকেরও রয়েছে।

“এই পরিস্থিতিতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে আসছে এটা দেখে যে, বাংলাদেশে মূলধনী যান্ত্রপাতি আমদানিতে কোনও শুল্ক দিতে হয় না। এই শুল্ক আরোপ তাদের ভুল বার্তা দেবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের ক্ষেত্রে এটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি মেটাতে সরকারকে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে যে বেসরকারি খাতকে ভুগতে হবে, তা তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণ নিতে বৈদেশিক উৎসের দিকে মনোযোগ দিতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুল বলেন, “আমরা সব সময় ভালো ঋণ গ্রহীতার পক্ষে। আমরা কখনও ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের পক্ষে ওকালতি করতে আসি না।

“তবে ভালো গ্রাহকরাও অনেক সময় বাস্তব কারণে খেলাপি হয়ে পড়তে পারে। ওই সময় ব্যাংক যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে ওই গ্রাহক আরও বিপাকে পড়ে। এ কারণে আমরা চাই, ব্যাংক যেন তার গ্রাহকের পাশে থাকে।”

প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা পূরণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই।

বৈদেশিক মূদ্রার উচ্চ বিনিময় হার, ঋণের সুদের হার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাজেট বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে মাহবুবুল বলেন, “মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্যও বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ।

“এ মূল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করি। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে।”

ধান, গম, গোল আলু, পেয়াজ, রসুন, মটরশুটি, ভোজ্য তেল, চিনি, বাদাম প্রভৃতি পণ্যের উপর আরোপিত উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করায় তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে বলে মনে করে এফবিসিসিআই।

বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে সরকারকে আহ্বান জানান মাহবুবুল।

তিনি বলেন, “কর কর্মকর্তাদেরেকে কর ফাঁকি বের করতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর জন্য পুরস্কার প্রথা বাতিল করে বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেয়া যায়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”

২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে স্মার্ট গ্রিড ব্যবস্থা প্রচলনসহ সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের যে কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানান মাহবুবুল।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানি এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির কর্পোরেট করহার শর্ত সাপেক্ষে আড়াই শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ করায় বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছে এফবিসিসিআই।

রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এডিআর সিস্টেম কার্যকর করার পাশাপাশি কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

কর আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদটি রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধির পরিবর্তে বিচার বিভাগীয় সদস্যকে দেওয়ার সুপারিশ করেন মাহবুবুল।

ঢাকার মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে বাজেট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইয়ের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ এফবিসিসিআইর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত