মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের জের ধরে আবারও বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন দেশটির রোহিঙ্গা নাগরিকরা। কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী টেকনাফে নাফ নদীর বেশ কয়েকটি স্থান দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশ প্রথমে রাজি না হলেও পরে মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয়। সেই দফায় প্রবেশ করে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা।
সবমিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারে গত কয়েক মাস ধরেই চলছে টানা সংঘাত-সংঘর্ষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের অন্তত ৯০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির জান্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই তীব্র হচ্ছে আরাকান আর্মির।
সেই লড়াইয়ের আঁচ এসে পড়ছে বাংলাদেশেও। সীমান্তের লোকজন ঘনঘন শুনতে পাচ্ছে বিস্ফোরণের শব্দ। কোথাওয় কোথাও বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে ঘর। নাফ নদীর ওপারে দেখা যাচ্ছে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, নাফ পেরিয়ে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছে বাংলাদেশি নৌযান।
দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল এই লড়াইয়ের মধ্যে আবারও আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গারা।
মিয়ানমারের মংডুর কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকটি এলাকার লাখের অধিক রোহিঙ্গা নাফনদীর ওপারে প্যারাবন, খালি জমি ও বন-জঙ্গলে অবস্থান করছেন। এদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে।
বিষয়টির সত্যতা মেলে টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেও।
তারা জানান, মঙ্গলবার বিকালের পর শুরু হওয়া বিস্ফোরণের শব্দ কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। টেকনাফ পৗরসভার জালিয়াপাড়া, সদরের মৌলভীপাড়া, সাবরাং এর নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপসহ নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। তারা নৌকা নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসব নৌকা ফিরিয়ে দেয়।
সীমান্তের কয়েকজন বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, বুধবার থেকে নাফনদী দিয়ে নৌকায় চেপে কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। যদিও সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যরা এদের অনুপ্রবেশ প্রতিহত করে ফেরত যেতে বাধ্য করে।
তবে এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য দেয়নি বিজিবি।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, “নাফ নদীর ওপারে বিস্ফোরণের শব্দ অব্যাহত আছে। শব্দ বলে দিচ্ছে ওপারে যুদ্ধ তীব্রতা বেড়েছে। এতে নাফ নদী হয়ে নৌকা যোগে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। সীমান্ত বিজিবি, কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রয়েছে। কোন অনুপ্রবেশ যাতে না হয় এর জন্য সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।”
কোনও তথ্য পেলে দ্রুত প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, “ওপারে মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় আছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারি, টহলও বাড়ানো হয়েছে।”
সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এবার অনুপ্রবেশের বিষয়ে সজাগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিস্ফোরণের শব্দের বিষয় উল্লেখ করে টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে এর জের ধরে কোনও ধরনের অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অনুপ্রবেশ করতে দেওয়ার সুযোগও নেই।
“অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।”