দিন-দুপুরেও অনেকের চোখে লেগে থাকে ঘুম। একটু পরপরই পায় ঝিমুনি। শরীরে যেন সারাদিন ক্লান্তি লেগেই থাকে।
বিশেষজ্ঞরা এমন লক্ষণ দেখে একে নিদ্রাজনিত অসুখ বা ‘স্লিপিং ডিজঅর্ডার’ বলবেন। তবে সম্প্রতি ‘নিউরোলজি’ পত্রিকায় ঘুমের সমস্যা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। তাতে গবেষকরা দাবি করেছেন, দিনের বেলা যদি সারাক্ষণ ঘুম পায় আর ঝিমুনি আসে, তবে তার লক্ষণ স্বাভাবিক না-ও হতে পারে।
এক-দুদিন এমন হতেই পারে। তবে লাগাতার এমন লক্ষণ যদি দেখা দিতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতি লোপ পাওয়ার রোগ দেখা দিতে পারে, বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকরা ৪৪৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মহিলাকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ছিল ৬০ থেকে ৭৫ বছরের মধ্যে। তিন বছর তাঁদের পর্যবেক্ষণে রেখে গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিলেন, ওই ৪৪৫ জনের মধ্যে যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা ছিল তারা দিনের বেলায় খুব বেশি ক্লান্ত থাকতেন। ফলে সারাদিনই তাদের ঝিমুনি লেগেই থাকত।
গবেষণায় দেখা গেছে সারাদিন ঝিমুনি লেগে থাকা ব্যক্তিদের আছে এক বিশেষ ধরণের মানসিক রোগ। যার নাম ‘মাইল্ড কগ্নিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট’ বা এমসিআর। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনাও ভুলে যান। আর এই রোগটি ‘ডিমেনশিয়া’ রোগের পূর্বলক্ষণ। বেশির ভাগ ডিমেনশিয়া রোগীরই প্রথমে এমসিআর রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
ঘুমের কী ধরনের সমস্যায় তাকে এমসিআর বলব?
গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রাতের পর রাত জেগে থাকেন। কারণ তাদের কিছুতেই ঘুম আসতে চায় না। অনেকে আবার পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও সারাক্ষণ ক্লান্তি অনুভব করেন।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পায় এবং সারাক্ষণই তারা ক্লান্ত বোধ করেন। আক্রান্তরা মাঝরাতে ঘুমের মাঝে প্রায়ই জেগে ওঠেন। আর একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে তাদের আর কোনভাবেই ঘুম আসে না।
দিনের যে কোন সময় প্রবল ঘুম পাওয়া এবং ঘুমের মাঝে জোরে জোরে নাক ডাকা এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।
মনোবিদদের মতে, ডিমেনশিয়া এমন এক রোগ যার হাত ধরে আসে মনের আরও অনেকরকম রোগ। এতে কারও যেমন ভুলে যাওয়ার রোগ হয়, আবার কারও ক্ষেত্রে আসে হঠাৎ আচরণের পরিবর্তন। কারও কারও আচরণ আবার প্রচণ্ড আগ্রাসী হয়ে ওঠে।
ডিমেনশিয়ার মতো ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যধি একা আসে না, আরও নানা অসুখকে সঙ্গে নিয়ে আসে। ওই ৪৪৫ জনের মধ্যে যাদের এমসিআর ধরা পড়েছিল, তাদের অনেকেই পরে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।