কতই বা বয়স হয়েছিল রাজিয়া সুলতানার? মাত্র ২৫ বছর বয়সেই পরপারে পাড়ি জমালেন জাতীয় নারী দলের ফুটবলার রাজিয়া। বৃহস্পতিবার পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার পর সাতক্ষীরায় মারা গেছেন এই রাইট উইঙ্গার।
রাজিয়া সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার মৌতলা ইউনিয়নের লক্ষ্মীনাথপুর গ্রামের নূর আলী সরদারের মেয়ে। রাজিয়ার গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাদ আসর অনুষ্ঠিত হবে নামাজের জানাজা।
২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজিয়া খেলেছেন জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে। ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে খেলেছেন। ভুটানে ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে ছিলেন চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। এছাড়া ২০১৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে জাতীয় দলে সাবিনা খাতুনদের সঙ্গে খেলেছেন রাজিয়া। ।
নারী ফুটবল লিগে খেলেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ও এএফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জার্সিতে।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্বামী ইয়াম রহমান। শুধু তাই নয়, এই মৃত্যুর জন্য তার শ্বশুরবাড়ির অবহেলাকে দায়ী করলেন ইয়াম, “আমি গাজীপুরে চাকরি করি। ইফতারির সময় বাসায় গিয়ে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু ফোনটা ওর ছোট ভাই রিসিভ করে বলে ব্যস্ত আছি। কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি যে ওর পেইন (প্রসব ব্যথা) উঠেছে। আসলে ওর প্রচুর ব্লাড ভেঙেছে (রক্তক্ষরণ)। কিন্তু কেউ বিষয়টা গুরুত্ব দেয়নি।”
তিনি যোগ করেন, “ওরা আমাকে গত রাত ১১টার সময় জানায় ছেলে ও মা সুস্থ আছে। কিন্তু পরে ওর প্রচুর রক্ত ঝরেছে। অচেতন হয়ে ছিল অনেক সময়। পরে ভোর বেলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে।”
স্ত্রীর হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি, “ আমি বলেছিলাম। আমার গাড়ি আছে, টাকা আছে। এখনকার বাচ্চা নরমাল ডেলিভারি করে না। সিজার করতে বলেছিলাম। কিন্তু ওরা শোনেনি।”
ইয়াম নিজেও ফুটবলার ছিলেন। খেলেছেন বসুন্ধরা কিংস অনূর্ধ্ব-১৮, সাইফ স্পোর্টিং যুব দলে। তৃতীয় বিভাগেও খেলেছেন। ভালোবেসে ৩ বছর আগে বিয়ে করেছিলেন রাজিয়াকে। কিন্তু অকালেই রাজিয়াকে হারিয়ে দিশেহারা তিনি, “কিভাবে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।”
রাজিয়ার মৃত্যৃতে শোকস্তব্ধ সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গন। শোক জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, নাসরিন স্পোর্টিংয়ের কোচ গোলাম রায়হান, জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার।