হিন্দি ‘মাস্তি’ সিনেমার সিকুয়েলগুলো দেখা থাকবে অনেকেরই। ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্র্যান্ড মাস্তি’ নির্মাণে ব্যয় যা হয়েছিল, প্রথম সপ্তাহেই এর প্রায় দ্বিগুণ আয় হয়। ‘এ’ মানে ‘এডাল্ট’ ক্যাটাগরিতে মুক্তি পাওয়া ‘গ্র্যান্ড মাস্তি‘ প্রথম সিনেমা ছিল যা বক্স অফিসে একশ কোটি রুপি আয় করে।
বলিউডে একই ধরনের কমবেশি আরও সিনেমা হয়। ওই হাওয়া লাগে টলিউডেও। যেমন, ‘বিবাহ অভিযান’ খানিক সেই আদলের একটি সিনেমা।
এই ধরনের সিনেমায় হালকা-পাতলা ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ বিষয়ের সঙ্গে থাকে প্রচুর হাস্যরস। আজকাল সোশাল মিডিয়াতে কৌতুকের জায়গা নিয়েছে মিম। কৌতুক হোক অথবা মিম – একটু বড়দের হাস্যরস যুগ যুগ ধরেই চলমান।
সেই ধারারই একটি ওয়েব ফিল্ম ‘ফিমেল ফোর’। বঙ্গ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মুশফিকুর রহমানের প্রযোজনায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের এই সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এবারের ঈদে।
এর আগে পাড়ার ঝুটঝামেলা নিয়ে নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘ফিমেল’ নাটকের তিনটি পর্বই ইউটিউবে লাখ লাখ ভিউ হয়েছে। ’ফিমেল ফোর’ আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গেছে বললেও অত্যুক্তি হবে না।
এরমধ্যে ১৯ জুন বঙ্গ তাদের ফেইসবুক পাতায় ঘোষণা দিয়েছে, মুক্তির পর দুই লাখ ‘পেইড ইউজার’ পেয়েছে বঙ্গ এবং দেড় কোটি মিনিট ‘পেইড ওয়াচটাইম’ পেয়েছে সিনেমাটি।
একই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাওয়া কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ওয়েব ফিল্ম ‘অসময়’ থেকে দ্বিগুণ এবং ওয়েব সিরিজ ‘হোটেল রিল্যাক্স’ থেকে চার গুণ বেশি দর্শক প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্জন করেছে ’ফিমেল ফোর’, বলে জানিয়েছে বঙ্গ । ১০০টিরও বেশি দেশ থেকে এই সিনেমা দেখা হয়েছে ওই সময়ের মধ্যেই।
সিনেমার সাফল্যে ‘ফিমেল ফোর’ টিম বঙ্গের ফেইসবুক পাতায় লাইভে এসে জানায়, ভালো কনটেন্ট টাকা দিয়ে দেখতে দর্শকের আপত্তি নেই। শুধু ‘পয়সা উসুল’ কনটেন্ট হতে হবে।
নিজেকে ‘পাড়া-মহল্লায় বেড়ে ওঠা ছেলে’ জানিয়ে লাইভে এসে ‘দূরদূরান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিতদের’ উচ্ছ্বাস নিয়ে পরিচালক কাজল আরেফিন অমি বলেন, “২০ টাকা দিয়ে কেউ আসলে ঠকেনি, সবাই জিতেছে।”
কী আছে ’ফিমেল ফোর’ সিনেমায়?
প্রাপ্তবয়স্ক কথাটা একটু ভারী শোনাবে; উপরন্তু এই সিনেমায় কোনো ১৮+ ক্যাটাগরিও দেওয়া নেই। তবে বড়দের কৌতুকের মতো চটুল হাস্যরসে ভরপুর এই সিনেমা। নাম ‘ফিমেল ফোর’ হলেও এ আসলে ব্যাটারি গলির পুরুষদের কাহিনী।
ব্যাটারি গলিতে থাকে নানা কিছিমের বড় ভাই, ছোট ভাই আর ভাতিজা। কেউ থাকে তিন বউ নিয়ে, কেউ আবার বউ পালানোর শোকে কাতর, কেউ ‘দ্রুত গতির ইন্টারনেট’ ব্যবসায়ী, কেউ ড্যান্সার, কেউ এলাকার ‘রানিং কমিশনার’, কেউ পাতি নেতা, কেউ আইবুড়ো তো কেউ ঘটক।
পাতি নেতা আনোয়ার ঘোষণা দিয়েছিল, ‘আমার ওয়ার্ডে ফিমেল নিয়া কোনো রকম ক্যাচাল চলবে না’; কিন্তু সরু গলির গ্যাঞ্জাম বনানী এলাকা পর্যন্ত ঠেকে এক ফিমেলকে দেখেই। বনানী এলাকার হোমড়াচোমড়াদের কি ব্যাটারি গলির ভাই-ব্রাদাররা ছেড়ে কথা বলবে?
এই তিল থেকে তাল হওয়ার উত্তেজনা নিয়েই সিনেমা এগিয়ে যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ধমকির বদলে হুমকি; তারপর দুই পক্ষের ধস্তাধস্তিতে থানা হাজত পর্যন্ত কাহিনী গড়ায়।
আজকে যে কেতাদুরস্ত মধ্যবয়সী তার স্মৃতিতেও মিলবে টিনএজ কি তরুণ বয়সে পাড়ার মোড়ে এর-ওর সঙ্গে এমন হাতাহাতির কেচ্ছা। অনেক খিস্তি আর রসালো সংলাপ নিয়ে ব্যাটারি গলি সেই আমেজ পুরোপুরি ফিরিয়ে দিয়েছে।
অভিনয় নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই। সিনেমায় অনেক চরিত্র। সবাই যার যার স্ক্রিন টাইমে পাড়া-মহল্লার অভিব্যক্তি দিয়েই অভিনয় করেছে।
অভিনয়ে আছেন জিয়াউল হক পলাশ, মারজুক রাসেল, শরাফ আহমেদ জীবন, পাভেল, শিমুল, সুমন পাটোয়ারি, শিবলু মৃধা, ইরেশ যাকের, নীলাঞ্জনা নীলা। সিনেমা পরিচালনার পাশাপাশি এর গল্পও লিখেছেন কাজল আরেফিন অমি।
মাঝে কোকাকোলার বিজ্ঞাপনকে ঘিরে ফেইসবুকে কিছু গ্রুপ-পেজে কাজল আরেফিন অমিকে ‘বয়কট’ করার ‘হুজুগ’ উঠেছিল। তাতে হয়তো অনেকে ভেবেছিলেন ‘ফিমেল ফোর’ এবং কাজল আরেফিন অমি এবার জমবে না। কিন্তু সিনেমার ‘দিজ ইজ ব্যাটারি গলি’ সংলাপে দর্শক মাতিয়ে খোশমেজাজেই আছে ‘ফিমেল ফোর’ টিম।