সাত দিনের চেষ্টায় নদীর নিচ থেকে ভাসানো গেল রজনীগন্ধাকে। তবে তা আংশিক, পুরোপুরি ভাসিয়ে ফেরিটিকে টেনে পাড়ে আনার চেষ্টা এখনও চলছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আংশিক ভাসিয়ে তোলার পর বুধবারের মধ্যেই ফেরিটি পানির নিচ থেকে টেনে তুলে পুরোপুরি ভাসানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন উদ্ধারকারীরা।
গত ১৭ জানুয়ারি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে আসার পথে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় বিআইডব্লিউটিসির ফেরি রজনীগন্ধা। ঘন কুয়াশার কারণে এটি তখন নদীতে নোঙর করে ছিল।
ফেরির সঙ্গে নয়টি ছোট-বড় ট্রাকও ডুবে গিয়েছিল। মঙ্গলবার আরেকটি ট্রাক উদ্ধার হয়েছে। তাতে এই পর্যন্ত সাতটি উদ্ধার হলো।
ফেরি ডুবে যাওয়ার পরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। এখন বিআইডব্লিউটিসির উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ দিয়ে ফেরিটিকে টেনে ওপরের দিকে তোলা হচ্ছে। নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরাও কাজ করে যাচ্ছেন।
মানিকগঞ্জের ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা, স্থানীয় সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বুধবার সকালে সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ‘ফেরিটি গতকাল সন্ধ্যার দিকেই নদীর তলদেশ থেকে উপরে আংশিক ভাসানো হয়েছে। সকাল থেকে ফেরিটি টেনে নদীর পাড়ের দিকে নিয়ে আসার কাজ করছে উদ্ধারকারীরা।”
উদ্ধারকাজে নিয়োজিতরা জানিয়েছেন, রজনীগন্ধা ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়ার সময় উল্টে গিয়েছিল। এ অবস্থায় লিফটিং ব্যাগে বাতাস দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে ডুবে যাওয়া ফেরিটি ভাসানোর চেষ্টা চলে। এরপর ‘প্রত্যয়’ দিয়ে ফেরিটিকে টেনে ওপরের দিকে তোলা হচ্ছে।
উদ্ধারকাজে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট শাহ পরান ইমন বলেন, “ডুবে যাওয়া ফেরির বিভিন্ন স্থানে ওয়্যার রফ (স্টিলের মোটা তার) বাঁধার কাজ করা হয়েছে। ফেরির ভেতরে ১০টি এয়ার লিফটিং ব্যাগ ঢোকানো হয়েছে। ব্যাগগুলোতে বাতাস ঢোকানোর পর এগুলো ফেরিটিকে ধীরে ধীরে ওপরের দিকে ভেসে উঠতে সহায়তা করে।
বুধবার সারাদিন চেষ্টা অব্যাহত থাকলে পুরো ফেরিটি টেনে তোলা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
তবে প্রচণ্ড শীত এবং নদীতে স্রোতের কারণে উদ্ধারকারী দলকে কাজে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর অতিরিক্ত পরিচালক ও স্যালভেজ ইউনিট প্রধান আব্দুস সালাম।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নিমজ্জিত ফেরিটিকে পানির লেভেলে ভাসানো সম্ভব হয়েছে। তা ধীরে ধীরে তীরের দিকে আনার চেষ্টা চলছে।
“তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ফেরি উদ্ধারে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে আশা করছি, কোনও ধরনের সমস্যা না হলে আজকের মধ্যেই ফেরি ওঠানোর কাজ হয়ে যাবে।”
এদিকে, ফেরির সঙ্গে ডুবে যাওয়া আরেকটি ট্রাক উদ্ধারের খবর দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ট্রাকটি টেনে তোলে।
হামিদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া নয়টি ট্রাকের মধ্যে সাতটি ট্রাক উদ্ধার করতে পেরেছি। বাকি দুটি এখনও শনাক্ত করতে পারিনি। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র সার্ভে জাহাজ ঝিনাই-১ তা শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করছি, বাকি দুটি ট্রাকও উদ্ধার করা যাবে।”
১৭ জানুয়ারি সকালে রজনীগন্ধা ডুবে যাওয়ার পর এতে থাকা থাকা ট্রাকের চালক, সহকারী ও ফেরির স্টাফসহ ২১ জনের মধ্যে ২০ জনকে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জীবিত উদ্ধার করে।
তবে নিখোঁজ থাকেন ফেরির সহকারী ইঞ্জিন চালক হুমায়ুন কবির। ফেরিডুবির ছয়দিন পর পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার ভাটিতে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মায় ভাসমান অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়।