সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে।
তবে সকাল ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখা মেলেনি ঢাকার সড়কগুলোতে।
বুধবার রাতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কোটা সংস্কার নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রত্যাশিত রায় আসার প্রত্যাশা জানিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ শেষ হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে নতুন এই কর্মসূচির ঘোষণা আসে।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সড়কে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি থাকলেও সকাল থেকে নগরীতে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রাইভেটকার বা ব্যক্তিগত গাড়িও চলছে কম।
তবে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির বাস বেশি দেখা গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যাও বেশি।
রাস্তায় গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় বৃহস্পতিবার কর্মব্যস্ত দিনেও ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজটের দেখা মেলেনি। গাড়িগুলো অপেক্ষা ছাড়াই বেশিরভাগ সিগন্যাল পার হতে পারছে।
সকালে ঢাকার শাহবাগ মোড় থেকে শুরু করে নীলক্ষেত ও পলাশীর মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশের ব্যারিকেড দেখা গেছে। মিডিয়াকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কাউকে সেদিকে তেমন যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
গত সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
নগরীর বনানী, গুলশান এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১১টা এসব এলাকার সড়কে বাস দেখা যায়নি। সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলছে।
মহাখালী এলাকাতেও গণপরিবহন কম। হাতে গোণা কয়েকটি বাস চলছে। মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে থেকে রাস্তার দুই ধারে রইছ পরিবহন ও বৈশাখী পরিবহনের বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে চলাচলরত বাসের সংখ্যা আরও কমে আসে।
এসব এলাকার প্রধান সড়কগুলোর পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও বিভিন্ন অলিগলিতে মানুষের জটলা দেখা গেছে। সেখানে তরুণদের চেয়ে কিশোরদের সংখ্যাই বেশি।
ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এই এলাকার পরিস্থিতিও শান্ত ছিল। তবে বেলা পৌনে ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এদিকে, গাবতলীতে বেশিরভাগ বাস কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে কল্যাণপুরে।
কল্যাণপুরে হানিফ কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতা আলম মিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ কোনও বাস যাচ্ছে না। যাত্রী দু-এক আসছেন তাদের ফেরত যেতে হচ্ছে।”
সেখানে বাস না পেয়ে ভোগান্তির কথা জানালেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মিম। তিনি জানান, ভার্সিটি বন্ধ থাকায় তিনি যে মেসে থাকেন সেখানে এখন কেউ নেই। খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। বাস না পাওয়ায় বাড়িও যেতে পারছেন না।
এদিকে, আসাদগেইটে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে। অন্যদিকে রাসেল স্কয়ারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সড়কে গণপরিবহন ও যাত্রী কম।
সায়েন্স ল্যাব ও সিটি কলেজ এলাকাতেও পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গণপরিবহন কম থাকায় এসব এলাকার সড়কেও অনেকটা ছুটির দিনের আমেজ দেখা গেছে। এলিফ্যান্ট রোডের চিত্রও একই রকম। বাটা সিগন্যাল মোড়ে আওয়ামী লীগকের কিছু কর্মীকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
এছাড়া বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা এলাকাতেও সড়কে যানবাহন চলাচল কম এবং পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।