দীর্ঘদিনের সহকর্মী আর শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে শেষ বারের মতো বিদায় নিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামাল দিচ্ছিলেন তিনি।
শুক্রবার বেলা ৩টার কিছু সময় পর ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৮৩ বছর বয়সী এই আইনজীবী।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে তার মরদেহ শেষবারের মতো আনা হয় দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজায় অয়শ নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন, প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলামসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, আইনজীবীসহ অসংখ্য মানুষ।
এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সেখানে উপস্থিত হয়ে হাসান আরিফের পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়ান। জানাজা শেষে প্রধান বিচারপতি শেষবারের মতো জানান ফুলেল শ্রদ্ধা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও জানানো হয় শ্রদ্ধা।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে হাসান আরিফের মরদেহ নেওয়া হয় সচিবালয় প্রাঙ্গণে, সেখানে হয় তৃতীয় জানাজা। এর আগে শুক্রবার রাতে ধানমণ্ডির সাত নম্বর সড়কের বায়তুল আমান মসজিতে হয়েছে প্রথম জানাজা।
হাসান আরিফের একমাত্র মেয়ে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এলে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে সমাহিত করা হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে।
হাসান আরিফ ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিম বাংলার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন হাসান আরিফ। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এর আগে এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বর্তমানে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।