কুয়েতের মানগাফ এলাকায় বুধবার ভোরে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪১ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এতে আহতের সংখ্যা ৪৩ জনের বেশি বলে জানিয়েছে আরব টাইমস।
নিহত শ্রমিকদের অধিকাংশই ভারতীয়। এদের মধ্যে পাঁচজন ভারতের কেরালার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে অনমানোরামা মিডিয়া।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে আহত ৪৩ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হতাহতদের মধ্যে কোনও বাংলাদেশি আছে বলে জানা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ছয়তলা ভবনটির একটি রান্নাঘর থেকে। কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলীয় আহমাদি গভর্নরেটের মানগাফ এলাকার ওই ভবনটিতে ১৬০ জন শ্রমিক থাকতেন।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত ও আহত ভারতীয় শ্রমিকদের সহায়তায় কুয়েতের ভারতীয় দূতাবাস জরুরি হেল্পলাইন চালু করেছে। যোগাযোগকারীদের সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও সোশাল মিডিয়া এক্সে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস।
কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৪২ লাখ। এর মধ্যে ২১ শতাংশই ভারতীয়। দেশটির শ্রমশক্তির ৩০ শতাংশ (প্রায় ৯ লাখ) ভারতীয়। বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম তেলের রিজার্ভ রয়েছে কুয়েতে। অতীতেও দেশটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে একটি তেল পরিশোধনাগারে আগুন লেগে চারজন নিহত হয়েছিল।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি সোশাল মিডিয়া এক্সে বলেন, “কুয়েত সিটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত শোকাহত। এই ঘটনায় ৪০ জনের বেশি নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।”
দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে জয়শঙ্কর আরও বলেন, “অগ্নিকাণ্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে আমাদের দূতাবাস।”
কুয়েত টাইমস বলছে, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ আল-ইউসুফ আল সাবাহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার ভবনটির মালিক, পরিচালক ও শ্রমিকদের কোম্পানির মালিককে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, “আজ যা ঘটেছে তা কোম্পানি ও ভবন মালিকদের লোভের ফল।”
তিনি কুয়েতের মিউনিসিপ্যালিটি ও জনশক্তি কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা মিডিয়াকে বলেন, “আগুন লাগা ভবনটিতে শ্রমিকরা বাস করতেন। ঘটনার সময়ে সেখানে অনেক শ্রমিক ছিল। দমকলকর্মীরা কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আগুন থেকে সৃষ্ট ধোয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে।”
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ভবনটিতে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত শ্রমিক বাস করতো। তবে ওই শ্রমিকরা কি ধরণের কাজে যুক্ত ছিলেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।
তথ্যসূত্র : আরব টাইমস, রয়টার্স, গালফ নিউজ, কুয়েত টাইমস ও অনমানোরামা।