Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

জীবন বাঁচাতে জীবন দেন যারা

আগুন
আগুন নেভানো আর উদ্ধারের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ
[publishpress_authors_box]

প্রাকৃতিক দুর্যাগ, অগ্নিকাণ্ড, নৌযান ডুবি কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা- যেকোনও বিপদেই প্রাণ বাঁচাতে সবার আগে ডাক পড়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদস্যদের।

দুর্ঘটনার খবর পেলেই এক মুহূর্তও দেরি না করে হুইসেল বাজাতে বাজাতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তারা। এরপর নিজের প্রাণ হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন অন্যের প্রাণ বাঁচাতে। শুধু মানুষই নয়, কোনও পশু-পাখির বিপদেও তাদের উদ্ধারে পিছপা হন না ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।

এভাবেই বারবার অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের অনেক সদস্য। অনেকেই বরণ করেছেন পঙ্গুত্বকে। সর্বশেষ গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালে খাগড়াছড়িতে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন রাসেল হোসেন (২১) নামের একজন।   

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আনুটিলা এলাকার ওই ঘটনা পর্যন্ত উদ্ধার কাজে গিয়ে বাহিনীর ৪৭ জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার জ্যেষ্ঠ স্টাফ অফিসার মো. শাহজাহান শিকদার জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একজন প্রাণ হারিয়েছেন স্বাধীনতার আগে। আর স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাসেল হোসেনসহ মারা গেছেন ৪৬ জন।

একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি বিএম ডিপো বিস্ফোরণে

২০২২ সালের ৪ জুন রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ৫১ জন। এর মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন ফায়ার সার্ভিস সদস্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কোনও দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এত সদস্যের মৃত্যু দেখেনি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।

ওই দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- নিপন চাকমা, মিঠু দেওয়ান, এমরান হোসেন সুজন, রানা মিয়া, মনিরুজ্জামান, আলাউদ্দিন, শাকিল তরফদার, রমজানুল ইসলাম, সালাহ উদ্দীন কাদের চৌধুরী, মো. রবিউল ইসলাম, ফরিদুজ্জামান, শফিউল আলম ও গাউসুল আজম।

কর্মক্ষেত্রে মারা গেলে যেসব সুবিধা পায় পরিবার

দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যু হলে অন্যান্য সরকারি চাকরির মতো ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের পরিবারও প্রচলিত সব সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

ঘূর্ণিঝড়ে গাড়ির ওপর পড়ে যাওয়া গাছ সরাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের তৎপরতা।

এছাড়া দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিহত সদস্যের মরদেহ পরিবহন ও দাফনের যাবতীয় খরচ দেয় ফায়ার সার্ভিস কল্যাণ তহবিল। ওই তহবিল থেকে প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ তহবিল থেকে নিহতের পরিবার পায় ৮ লাখ টাকা। আর দায়িত্ব পালনের সময় কেউ আহত হলে পান ৪ লাখ টাকা।

এছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় হতাহত হলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকেও সহায়তা পান ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার জ্যেষ্ঠ স্টাফ অফিসার শাহজাহান শিকদার সকাল সন্ধ্যাকে জানান, কোনও সদস্য হতাহত হলে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলেও আবেদন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ফায়ার ফাইটার সোহেল রানাকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা সহায়তা করা হয়েছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জঙ্গি অভিযানে গিয়ে নিহত ফায়ার সার্ভিস সদস্য আব্দুল মতিনের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল এবং পুলিশ।

রেমাল : উদ্ধার কাজে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ফায়ারফাইটারের মৃত্যু

শাহজাহান শিকদার বলেন, “ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যারা অগ্নিকাণ্ডসহ সব দুর্যোগে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা মানুষের জীবন নিরাপদ রাখতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধা করেন না।

“তারা অন্যের বিপদে নিজের জীবনের পরোয়া করেন না। এভাবেই নিবেদিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন আমাদের অনেক কর্মী। আমরা সবসময়ই তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”

ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও উদ্দেশ্য

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়াধীন একটি জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের সব কার্যক্রম জনগণের সেবায় নিবেদিত।

১৯৩৯-৪০ অর্থবছরে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার অবিভক্ত ভারতে ফায়ার সার্ভিস সৃষ্টি করে। ভারত বিভক্তিকালে আঞ্চলিক পর্যায়ে কলকাতা শহরের জন্য কলকাতা ফায়ার সার্ভিস এবং অবিভক্ত বাংলার জন্য (কলকাতা বাদে) বেঙ্গল ফায়ার সার্ভিস সৃষ্টি করা হয়।

আগুন
গ্রিন কোজি কটেজে জ্বলছে আগুন। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছেন মানুষকে নিরাপদে নামিয়ে আনতে। ছবি : হারুন অর রশীদ

১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিসকে পূর্ব পাকিস্তান ফায়ার সার্ভিস নামে অভিহিত করা হয়। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভারতে বে-সামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ প্রাথমিক পর্যায়ে Air Raid Precautions (ARP) এবং পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৫১ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সৃজিত হয়। কর্মব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন রেসকিউ বিভাগ নামে একটি বিভাগ সৃষ্টি হয়।

১৯৮১ সালের ৯ এপ্রিল তৎকালীন ফায়ার সার্ভিস পরিদপ্তর ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসারে একীভূত হয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন রেসকিউ বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে অন্তর্ভুক্ত হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ‘দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনটি আদর্শবাণী বা মূলমন্ত্রকে অনুসরণ করা হয়। সেগুলো হলো গতি, সেবা ও ত্যাগ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত