কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশে কয়েক ধাপে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকার মহাখালীর ডাটা সেন্টারে যে আগুন লাগার কথা বলেছিল, তা ছিল জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার ও প্রতারণা। এ কথা জানিয়ে তদন্ত কমিটি বলছে, ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের সম্পর্ক ছিল না।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যতা পূরণে গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন মো. নাহিদ ইসলাম, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক।
গত ১১ আগস্ট প্রথম কর্মদিবসে নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণ বের করতে তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইন্টারনেট অচল করা ছিল বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য : আরাফাত
এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তের পর মঙ্গলবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
সেখানে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন একাধিকবার দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউন হয়। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। দেশব্যাপী মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট শাটডাউনের কারণ এবং সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নির্দেশক্রমে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫-১৬ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট এবং গত ১৮-২৩ জুলাই ও ৫ আগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়াই ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মৌখিক নির্দেশক্রমে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশনায় সম্পন্ন করা হয়।
অন্যদিকে গত ১৭-২৮ জুলাই ও ৫ আগস্ট মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ও চালু করার বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) নির্দেশনায় সম্পন্ন করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যায় যে, বর্ণিত সময়ে ডাটা সেন্টারে আগুন লাগার সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধের কোনও সম্পর্ক ছিল না। ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে ডাটা সেন্টারে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত করে প্রচারণার মাধ্যমে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন।
এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলমান আছে বলেও জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।