টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটের নৌযানে মিয়ানমার থেকে আবারও গুলি চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে যাত্রীবাহী একটি স্পিড বোট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের এ ঘটনার পর দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে গুলিবর্ষণের আতঙ্কে গত ৫ জুন থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই রুটে কেউ নৌযান চালাচ্ছে না। এ কারণে দ্বীপটিতে খাদ্য সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিজিপি না কি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীরা এসব গুলি ছুড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে ১০ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য যায় টেকনাফ থেকে। মানুষ ও পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নৌযান। টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে প্রতিদিনই দ্বীপের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন ট্রলারে। খাদ্যপণ্য পরিবহনেও ব্যবহৃত হয় ট্রলার।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাত গত ফেব্রুয়ারি মাসে জোরাল হয়। এই সংঘাতের জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ রুটের নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমার থেকে ছোড়া হচ্ছে গুলি।
গত ৫ জুন সেন্ট মার্টিন থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। গুলিতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি।
এরপর ৮ জুন পণ্যবাহী ট্রলারে গুলিবর্ষণ করা হয় মিয়ানমার থেকে। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটিতে গুলি লাগে সাতটি।
এমন পরিস্থিতিতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে গুলিবর্ষণের শিকার হওয়া স্পিড বোটের মালিক সেন্টমার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি ও দ্বীপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, চিকিৎসার জরুরি প্রয়োজনে টেকনাফ যাওয়া পাঁচজনের সেন্টমার্টিনে আসার প্রয়োজন ছিল। স্পিড বোটের চালক মোহাম্মদ বেলাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের নিয়ে টেকনাফের কায়ুকখালী ঘাট থেকে রওনা দেন।
বোটটি নাফ নদীর বদরমোকামের গোলগরা পয়েন্টে পৌঁছলে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে ট্রলারে থাকা অস্ত্রধারীরা বাংলাদেশের জলসীমায় এসে টানা ১০-১২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
চালক বেলাল তখন বোটের গতি বাড়িয়ে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে যান। দুপুর ১২টার দিকে নৌযানটি সেন্টমার্টিন পৌঁছায়।
সেন্টমার্টিনের এই জনপ্রতিনিধি জানান, কাঠের ট্রলার বা সার্ভিস বোটে যাত্রী বা পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। ট্রলারগুলোকে নাফ নদী এবং বঙ্গোপসাগরের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে এসে মিয়ানমারের কাছাকাছি এলাকা অতিক্রম করতে হয়। স্পিড বোট অনেক দূর থেকে চললেও কেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের জলসীমায় এসে গুলি করা হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, “পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপের মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে।”
বাংলাদেশের ট্রলার ও স্পিড বোট লক্ষ্য করে বিজিপি নাকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী গুলি ছুড়ছে, তা নিশ্চিত নন বলে জানান ইউএনও আদনান চৌধুরী।
একই কথা বলেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, “নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে মিয়ানমারে অবস্থানরত অস্ত্রধারীরা কারা, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তারা ট্রলারে অস্ত্র হাতে নাফ নদীতে টহল দিচ্ছে।
“সেন্টমার্টিনগামী ট্রলার বা স্পিড বোট দেখলেই গুলি করছে ওই অস্ত্রধারীরা। মঙ্গলবারের ঘটনার পর দ্বীপজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী যাত্রী ও পণ্যবাহী সব নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপটিতে খাদ্য সঙ্কেটের আশঙ্কা আছে।”
নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ডের জাহাজের সাহায্যে সেন্ট মার্টিনে খাদ্যপণ্য পৌঁছানোর দাবি জানান তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিড বোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার জেরে সম্প্রতি নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
“জরুরি ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ অংশ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে বঙ্গোপসাগর হয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া বিষয় চিন্তা করা হয়েছে। এ নিয়ে রবিবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনাও হয়েছে।”