Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা : কে করলেন, কোন ঘটনায়

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের এক সপ্তাহ পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয়েছে আদালতে।

মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে মামলার আবেদনটি করেন এস এম আমীর হামজা শাতিল নামে এক ব্যক্তি। তিনি একজন দুগ্ধ খামারি।

আবু সায়েদ নামে মোহাম্মদপুরের বছিলার এক মুদি দোকানি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এই মামলা করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনকে।

ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মোহাম্মদপুর থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারে গত জুলাই মাসের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরে গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ হামলা চালানোর পর শুরু হয় সংঘাত।

তারপর দিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জন নিহত হয়। এরপর ১৮ জুলাই থেকে পাঁচ দিনেই শতাধিক নিহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।

কয়েকদিন পর সরকার দাবি মেনে কোটা সংস্কার করলেও হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে আন্দোলন চলতে থাকলে সরকার কঠোর হাতে তা দমনের ঘোষণা দেয়।

তাতে সংঘাত আরও বাড়ে, আন্দোলনও তীব্র হয়ে ওঠে। সেই আন্দোলনের তোড়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে।

সহিংস এই আন্দোলনে প্রায় হাজারের মতো মানুষ নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্য থেকে সম্প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। তারপরই ঢাকার আদালতে প্রথম মামলাটি হলো।

যে হত্যাকাণ্ডের জন্য মামলা

আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার যে কয়টি এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংঘাত ঘটেছিল, তার একটি মোহাম্মদপুর। সেখানে গত ১৯ জুলাই বিকালে মুদি দোকানি আবু সায়েদ (৪৫) নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলাটি হয়েছে।

আরজি অনুযায়ী, আবু সায়েদ নিহত হন ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলা ৪০ ফুট চৌরাস্তা পাকা রাস্তা ওপর। তিনি আন্দোলনে ছিলেন না। রাস্তা পার হওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে তিনি মারা যান।

আবু সায়েদের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নে নতুন বস্তি প্রধানহাটে। তার লাশ সেদিনই পঞ্চগড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে আরজিতে বলা হয়।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যামামলার বাদী এস এম আমীর হামজা।

বাদী কে, সাক্ষী কারা

মামলার বাদী এস এম আমীর হামজা শাতিল মোহাম্মদপুরের আদাবর থানার বাসিন্দা। তিনি নিজেকে আইন মান্যকারী, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।

নিহত আবু সায়েদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক না থাকলেও মামলার বাদী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরজিতে বলেছেন, “পুলিশের গুলিতে গরিব মুদি দোকানি আবু সায়েদের মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে কোনও মামলা হয়নি। যেহেতু সুদূর পঞ্চগড়ে আবু সায়েদের গ্রামের বাড়ি এবং তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারছে না।”

সে কারণে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য সচেতন নাগিরক হিসাবে এই মামলা করেছেন বলে হামজা আরজিতে উল্লেখ করেছেন।

আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নে হামজা বলেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ‍যুক্ত নন। তিনি একজন দুগ্ধ খামারি। নাগরিক হিসাবে নিজের তাগিদেই এই মামলা করেছেন তিনি।

মামলা করার আগে সায়েদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, তারা আসতে না পারায় এই মামলা করেছেন তিনি।

মামলার সাক্ষী হিসাবে নিজেসহ পাঁচ জনের নাম দিয়েছেন হামজা। তারা হলেন- বাগেরগহাট জেলার ফকিরহাট থাকারর রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা ইফতেখার আহেদ, মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার কৃষষ্ণপুর গ্রামের সামাদ, মিরপুরের দারুস সালাম রোডের বাসিন্দা এস এম হাসানুল ইসলাম এবং এস এম রকিবুল ইসলাম মেশকাত (তার ঠিকানা লেখা হয়নি)।

আরও সাক্ষী আছে জানিয়ে আরজিতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তাদের আদালতে হাজির করা হবে।

আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আরেকজন ইয়াসিন আহমেদ রাজের হত্যার বিচার দাবিতে মঙ্গলবার ঢাকায় মানববন্ধন হয়।

আসামি কে কে

হামজা তার মামলার আবেদনে আসামির তালিকায় মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, “আসামিগণ খুনি, ক্ষমতালোভী ও নির্যাতনকারী।”

আসামির তালিকায় ১ নম্বরে রয়েছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নাম, যিনি এখন ভারতে রয়েছেন।

২ নস্বরে রয়েছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নাম। সরকার পতনের পর তাকে আর দেখা যায়নি।

তৎকালীন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে ৪ নম্বরে। ক্ষমতার পালা বদলের পর পুলিশ প্রধানের চাকরি হারিয়েছেন তিনি।

৪ নম্বরে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুর-অর রশীদের নাম। তিনি গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বে ছিলেন। পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সরকার পতনের পর তার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম রয়েছে পাঁচ নম্বরে। সরকার পতনের পর তাকে আর দেখা যায়নি।

৬ নম্বরে রয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকারের নাম। সরকার বদলেল পর তিনি প্রকাশ্যে নেই।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমানের নাম রয়েছে ৭ নম্বরে। সরকার পতনের পর তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ৪ আগস্ট রাতে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তিনি, তারপর থেকে আর প্রকাশ্য হননি।

ওবায়দুল কাদেরের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়। ফাইল ছবি : সকাল সন্ধ্যা

অভিযোগ কী, কার কোন দায়

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। এরপর আন্দোলন দমানোর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দমন-পীড়ন শুরু করে।

আরজিতে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকাল ৪টায় মোহাম্মদপুর থানাধীন বছিলা ৪০ ফুট চৌরাস্তা পাকা রাস্তা ওপর হাজার হাজার জনতা কোটা সংস্কারের সমর্থনে মিছিল করছিল। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। তখন আবু সায়েদ রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান।

আরজিতে গুলির নির্দেশদাতা হিসাবে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে দায়ী করে বলা হয়, “১ ও ২ নম্বর আসামির নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়।

“তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ১ নম্বর আসামি আন্দোলন শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন।”

দুই পুলিশ কর্মকর্তা হারুন ও বিপ্লবের বিষয়ে বলা হয়, “৩ নম্বর আসামি হারুন-অর রশীদ এবং ৬ নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার সরকার জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন।”

আসাদুজ্জামান কামালকে নিয়ে বলা হয়েছে, “৫ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন।”

সাবেক পুলিশ প্রধান মামুন এবং ডিএমপি প্রধান হাবিবের বিষয়ে আরজিতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু লেখা হয়নি। মোহাম্মদুপুরে কোন পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা গুলি করেছিলেন, সে বিষয়েও কিছু নাই।

তবে বলা হয়েছে, “অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আবু সায়েদ হত্যার তদন্ত হলে অজ্ঞাতনামা আরও আসামি তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, এমপি, পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যের নাম উঠে আসবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত