গাজায় মৃত স্বজনদের সঙ্গে গাড়িতে আটকা পড়া পাঁচ বছরের আলোচিত সেই ফিলিস্তিনি শিশুটি উদ্ধার হয়েছে ঠিকই। তবে নিথর শরীরে। চাচা-চাচী আর চাচাত ভাইবোনদের সঙ্গে তাকেও পাওয়া গেছে মৃত।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে, গত ২৯শে জানুয়ারি চাচা, চাচী ও তাদের চার সন্তানের সঙ্গে একটি গাড়িতে করে উত্তর গাজা থেকে পালাচ্ছিল পাঁচ বছরের হিন্দ রজব। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
সেসময় সবাই মারা গেলেও বেঁচে ছিল হিন্দ রজব। অন্তত রেড ক্রিসেন্টের জরুরি পরিষেবায় করা টেলিফোনের তথ্য থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। তার বেঁচে থাকার আকুতি সম্বলিত অডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাকে বাঁচাতে চেষ্টাও করে পিআরসিএস। কিন্তু যুদ্ধের ব্যাপকতার মধ্যে হিন্দ রজবকে বহনকারী গাড়িটির কাছে কেউ পৌঁছতে পারেনি।
সেই ঘটনার ১৩ দিন পর শনিবার সিএনএনের খবরে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধারের কথা জানানো হলো।
শিশুটির দাদার সঙ্গে কথা বলেছেন সিএনএনের সাংবাদিক খাদের আল জাআনউন। তিনি বলেন, “হিন্দ রজব ও তার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সবাইকে দুই সপ্তাহ পরে গাজা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে তাল আল-হাওয়া এলাকার ফারেস পেট্রোল স্টেশনের কাছে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযান চলতে থাকায় এতদিন তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জানা সম্ভব হয়নি।”
শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পাঠানো দুই অ্যাম্বুলেন্স কর্মীকেও হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মেয়েটিকে উদ্ধার করার জন্য আমাদের অ্যাম্বুলেন্সকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি দিলেও ইসরায়েলি সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবেই রেড ক্রিসেন্টের কর্মীদের গুলি করে হত্যা করেছে।”
গত ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে পিআরসিএসের দেওয়া ঘটনাস্থলের অবস্থানের তথ্যসহ বিস্তারিত জানায়। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, তারা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানে না।
এরপর সিএনএন আবার যোগাযোগ করেছিল। তখন আইডিএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালাতে শুরু করলে গাড়িতে থাকা হিন্দ রজবের চাচাতো ভাই, ১৫ বছর বয়সী লায়ান হামাদেহ রেড ক্রিসেন্টের জরুরি পরিষেবায় সাহায্যের জন্য টেলিফোন করে। পিআরসিএস সেই কলটি রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে।
অডিওটিতে গুলির শব্দও শোনা যায়। তীব্র গোলাগুলির মধ্যেই লায়ানকে চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, “তারা আমাদের দিকে গুলি চালাচ্ছে। ট্যাঙ্কটা আমার ঠিক পাশেই। আমরা গাড়িতে রয়েছি, ট্যাঙ্কটি আমাদের ঠিক পাশেই রয়েছে।”
এরপর লায়ানের গলা আর শোনা যায়নি, গুলিও থেমে যায়।
ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা প্যারামেডিকরা লায়ানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তারা বারবার “বলছে, “হ্যালো?” বললেও লায়ানের আর সাড়া পাওয়া যায়নি। গোলাগুলির এক পর্যায়েই তার মৃত্যু হয় বলে ধারণা করছে রেড ক্রিসেন্ট।
তবে গাড়িরর ভেতরে বেঁচে ছিল হিন্দ। একা, আতঙ্কিত এবং চারপাশে স্বজনদের মৃতদেহ নিয়ে গাড়িতে আটকা পড়া হিন্দ সাহায্যের জন্য মরিয়াভাবে আহ্বান জানাচ্ছিল।
পিআরসিএস প্রকাশিত অডিওতে শোনা যায় হিন্দ বলছে, “আমাকে নিতে আসো। তুমি কি এসে আমাকে নিয়ে যাবে? আমি খুব ভয় পাচ্ছি, দয়া করে আসো!”
হিন্দের মা ইসাম হামাদা শুক্রবার সিএনএনকে বলেন, “আমার মেয়েটি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ঘটনার পর থেকে প্রতিটি সেকেন্ড আমি তার জন্য অপেক্ষা করেছি।”