হাসি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু দাঁতে ফাঁকা থাকলে সংকোচে আর বেশি হাসেন না কেউ। তাই খরচাপাতি করে হলেও দাঁতের ফাঁকা পূরণ করে নেন অনেকেই।
দাঁতে ফাঁকা হওয়ার যেমন কারণে আছে, ফাঁকা পূরণের তেমন নানা চিকিৎসাও আছে।
দাঁতে ফাঁকা বলতেই বেশিরভাগ ধারণা করেন, সামনের দিকে দুটি দাঁতের মাঝে কিছু ফাঁকা থাকা। একে মিডলাইন বা মিডিয়ান ডায়াস্টেমা বলে। নিচের দাঁতে মাঝামাঝি জায়গায় ফাঁকা হলে বলে ম্যানডিবুলার ডায়াস্টেমা।
দাঁতের কোনো সমস্যা থেকেই এই ফাঁকা জায়গা দেখা দেয়। কতটুকু ফাঁকা, কয়টি দাঁতের মাঝে ফাঁকা রয়েছে তা মেপে নিয়ে তবেই চিকিৎসা এগোনো যাবে।
কেন দাঁতে ফাঁকা হয়
শিশু-কিশোর বয়সীদের মধ্যেই দাঁতে ফাঁকা বেশি দেখা যায় সাধারণত। বিশেষ করে যখন দুধের দাঁত থাকে। বড় হতে হতে পরিণত দাঁত উঠে এই ফাঁকা পূরণ হয়ে যায়। এই কারণে চিকিৎসকরা শিশু-কিশোরদের জন্য সাধারণত ব্রেস পরার পরামর্শ দেন না।
যদি পরিণত দাঁত গজানোর পরও ফাঁকা রয়ে যায়, তাহলে অবশ্য কারণ খতিয়ে দেখতে হবে।
সাধারণত দাঁতের সংখ্যা-আকারের সঙ্গে চোয়ালের আকারে তফাত থাকলে ফাঁকা জায়গা দেখা দেয়। কখনও কখনও বংশগত কারণে এমন হয়ে থাকে। একেবারে শিশু বয়সে বুড়ো আঙুল মুখে পুরে রাখার অভ্যাস থাকলেও দাঁতে ফাঁকা হতে পারে।
মুখের সামনের অংশের দুই পাশে ল্যাটারাল ইনসিজর দাঁত যদি ছোট হয়, তাহলেও ফাঁকা হতে পারে। আবার গাম ডিজিজ বা পেরিওডন্টাইটিস অর্থ্যাৎ মাড়ির প্রদাহ থেকে দাঁড় পড়ে যেতে পারে। আবার দাঁত তুলে ফেলতে হতে পারে। এরপর এই ফাঁকা জায়গার কারণে বাকি দাঁতেও ফাঁকা হতে পারে।
ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা কেন দরকার
সাধারণ হাসি ও চেহারায় সৌন্দর্যর আনতে দাঁতের ফাঁকা বন্ধ করিয়ে নেন বেশির ভাগ মানুষই।
তবে যদি পেছনের দিকে ফাঁকা থাকে তাহলে দাঁতের সুরক্ষার জন্যই চিকিৎসা করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ফাঁকা থাকলে সেখানে খাবার আটকে প্লাক জমবে এবং ব্যাকটেরিয়া হবে। যদি সময়মত এর চিকিৎসা না হয়, তাহলে দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় হতে শুরু করবে।
নিয়মিত ফ্লস ও ব্রাশ করা জরুরি তাই। কিন্তু মাড়ির পেছনের দিকে দাঁত পরিস্কার করা সহজ হয় না। এজন্যই চিকিৎসকরা শুরুতেই বলে দেন, দাঁতের ফাঁকা বন্ধ করে নিতে; তাতে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
ফাঁকা দাঁতের চিকিৎসা কী
দাঁতের ফাঁকা দূর করার কয়েক রকম উপায় আছে। কোনটি ভালো হবে তা চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করেই বোঝা যাবে। আর এক্ষেত্রে শুধু সৌন্দর্যই নয়, মুখের সুস্বাস্থ্যের কথাও ভাবতে হবে।
পোরসেলিনের তৈরি ভেনিয়ার্স পরিয়ে দাঁতের ফাঁকা মেটানো যায়। এক্ষেত্রে দেখতে একেবারে স্বাভাবিক লাগবে। তবে ফাঁকা সামান্য হলেই ভেনিয়ার্স বসানো হয়। পেছনের দিকে ফাঁকা হলে সেখানে সাধারণত ভেনিয়ার্স দেয়া হয় না।
ডেন্টাল বন্ডিং করেও ফাঁকা দূর করা যায়। ভেনিয়ার্স দীর্ঘদিন ভালো থাকলেও, ডেন্টাল বন্ডিং করালে তা পাঁচ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ঠিক থাকবে। সাধারণত দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত হলে ডেন্টাল বন্ডিং করানো হয়।
যদি মাড়ির কোনো দাঁত তুলে ফেলা হয়, সেসময় ওই ফাঁকা জায়গায় ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট করে দিতে হয়। মাড়ির সুরক্ষায় এই চিকিৎসা জরুরি হয়ে ওঠে। এতে করে আশেপাশের দাঁতে ক্ষয় ও ফাঁকা হয় না। দাঁতে সাধারণ ফাঁকা হওয়ার সমস্যায় ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট করা লাগে না।
ফাঁকা দাঁতে সাধারণত ব্রেস ও ইনভিজলাইন করানো হয়। এতে দাঁত মাড়ির বাকি দাঁতের সঙ্গে এক সারিতে আসে। ব্রেস বা ইনভিজলাইন বসানো হলে দাঁতে সামান্য চাপ লাগবে।
যাদের ফাঁকা খানিক বেশি তাদের জন্য ব্রেস খুব ভালো কাজে দেয়। ফাঁকা কম হলে ইনভিজলাইন করানো হয়।
কী ধরনের ব্রেস বসানো হবে তা চিকিৎসকই ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারবেন। মেটাল ব্রেস যেমন রয়েছে, তেমন স্বচ্ছ সিরামিক ব্রেস আছে। আবার দাঁতের পেছনে লাগানো হয় লিঙ্গুয়াল ব্রেস। এতে করে মেটাল ব্রেসের মতো সামনে থেকে সামনে থেকে দেখে বোঝা যায় না।