Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার কারণ কী

ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যা
ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যা
[publishpress_authors_box]

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি নদীর পানি হঠাৎ যেন ফুঁসে উঠেছে। এসব নদীর পানিতে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলায় ভায়বহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলার বেশ কিছু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে আকস্মিকভাবে ফেনী, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যা স্বল্পমেয়াদী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভারতের ত্রিপুরার একাধিক সংসবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে রাজ্যে। এতে এখন পর্যন্ত সাত জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও দুজন। বন্যার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর ফলে পানি ঢুকছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বুধবার সকাল থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী ও হালদা- এই সাতটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সামনে বন্যার পানি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুধবার জানিয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীর পানি কিছু কিছু পয়েন্টে বাড়তে পারে।

মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধোলাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এ কারণে এসব নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিলেও তা স্থিতিশীল থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও গোমতী নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে কুমিল্লা জেলার গোমতীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে। তাই এসব জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা হলেও তা হবে স্বল্পমেয়াদী।

দেশের তিনটি প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর পানি কমতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। একই কারণে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা রাজ্যের আরও ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের দিকে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি দুর্বল হয়ে দিক পরিবর্তন করে গত ১৮ ও ১৯ আগস্ট। দিক বদল করে দুর্বল লঘুচাপটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল দিয়ে উত্তর-পূর্বে আসাম, মেঘালয়ে চলে গিয়ে ভারি বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।

“এ কারণেই এসব অঞ্চলের পাহাড়ি ঢলের পানি আমাদের সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। আর আকস্মিক বন্যা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী হয় না”, বলেন উদয় রায়হান।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে ৩০৩ মিলিমিটার ও ত্রিপুরার আগরতলায় ১৮২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এ সময় বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের মহেশখোলায় ২১৫, নেত্রকোনার জারিজাঙ্গাইলে ১৬০, দুর্গাপুরে ১৩৯, মৌলভীবাজারের দক্ষিণবাগে ১৭৫, ভৈরব বাজারে ১৫৬, সুনামগঞ্জের নরেরঘরে ১৩০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৭০, চট্টগ্রামের নারায়ণহাটে ১৫৬, চাঁদপুরে ১০০, ময়মনসিংহে ১০৬, ফেনীর পরশুরামে ৫৭, সিলেটের জাফলং ৭৫ এবং কুমিল্লায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আগামী শুক্রবার ২৩ আগস্টের পর বৃষ্টির মাত্রা কমতে পারে বলে বুধবার জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

এর প্রভাবে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।

সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

ত্রিপুরার সাত জনের মৃত্যু, দুই জেলায় লাল সতর্কতা

জাগরণত্রিপুরা ডটকম জানিয়েছে, গোমতী নদীর পানি চরম বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা।

আগামী পাঁচ দিন ত্রিপুরায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। বুধবারও দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে জনজীবনে ব্যাপক ছন্দপতন ঘটেছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সর্বাধিক বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে আগরতলায় ১৮২ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন খুমলুঙে ১৮ মিলিমিটার।

আবহাওয়া দপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিপাহীজলা ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় লাল সর্তকতা এবং বজ্রবিদ্যুৎ ও ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সর্তকতা জারি করেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের সব জেলায় কমলা সর্তকতাও জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর।

চারদিনের টানা বৃষ্টিতে রাজ্যজুড়ে ১৭টি বাড়ি সম্পূর্ণ, ২৫০টি মারাত্মকভাবে ও ৬২০টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। আহত হয়েছে দুই জন।

‘ডম্বুর রক্ষা পেলেও বিপদ বাড়াচ্ছে গোমতী’

ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যম দৈনিক সংবাদ ‘ডম্বুর রক্ষা পেলেও বিপদ বাড়াচ্ছে গোমতী’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গতকাল মঙ্গলবার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদিনের টানা বর্ষণে ডম্বুরের পানি বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডম্বুরের পানি বিপৎসীমার উপরে উঠে যাওয়ায় প্রশাসন বাধ্য হয়ে গেট খুলে দেয়। এতে রক্ষা পায় ডম্বুর।

বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতেই ঘোষণা দিয়ে পানির গেট খুলে দেয় প্রশাসন। এতে গোমতীর পানি আবারও বেড়ে গিয়ে করবুক, অমরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।

ডম্বুরের বাঁধ খুলে দেওয়ার ঘোষণা হতেই বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

ত্রিপুরার সংবাদমাধ্যম বোরক টাইমস জানিয়েছে, ১৯৯৩ সালের পর প্রথমবারের মতো ত্রিপুরার ডুম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ত্রিপুরায় চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৫ হাজার ৬০০ পরিবার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। অবিরাম ভারি বর্ষণে এই অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার ফলে জলাধারের পানির স্তর বেড়ে যাওয়ায় ৩১ বছর পর এই গেট খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডম্বুর জলবিদ্যৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। সমভূমিতে নদীতে পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। কৃষিজমি ও আবাসিক অঞ্চলসহ অনেক এলাকা নিমজ্জিত হয়েছে। হাজার হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পাণ্ডে সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাজ্যের দক্ষিণ ত্রিপুরা ও গোমতী জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বাগাফায় ৩৭৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার, বেলোনিয়ায় ৩২৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং অমরপুরে ৩০৭ দশমিক ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ত্রিপুরার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হাওড়া নদী বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়, ধলাই নদী মৌলভীবাজারে, মুহুরি নদী ফেনী জেলায় এবং খোয়াই নদী সিলেটে প্রবেশ করেছে।

ত্রিপুরার গোমতী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে জানিয়েছেন, গোমতী নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত