সারা বিশ্বে বন্যার ঝুঁকি এবং ক্রস-রিজিয়ন স্ট্রিম বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে স্রোত প্রবাহের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম একটি নতুন শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল তৈরি করেছে চীনের বিজ্ঞানীরা। এটি এমনকি হাইড্রোলজিকাল রেকর্ড নেই এমন অববাহিকায়ও বন্যার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।
ইডি-ডিএলএসটিএম নামের এই এআই মডেলটি অন্যান্য পূর্বাভাস মডেলের মতো ঐতিহাসিক স্ট্রিমফ্লো বা স্রোত প্রবাহের ডেটার উপর নির্ভর করে না, তার পরিবর্তে উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে।
পিয়ার-রিভিউড জার্নাল দ্য ইনোভেশন-এ গত ৬ মে তারিখে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে মডেলটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সেখানে চাইনিজ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (সিএএস) এর গবেষকরা তাদের মডেলটি কীভাবে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে তা জানান।
সিএএস ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেন হ্যাজার্ডস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সংশ্লিষ্ট লেখক ও অধ্যাপক ওইয়াং চাওজুন বলেন, “আমরা ঐতিহাসিক মনিটরিং ডেটা আছে এমন বেসিনের তথ্য ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি মহাদেশীয় স্তরে মডেলটিকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।”
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি স্রোতপ্রবাহের রেকর্ড না থাকা বেসিনের মধ্যেও প্রবাহের পূর্বাভাস দিতে পারে।
গবেষণাপত্রটিতে গবেষকরা লিখেছেন, “আমাদের প্রস্তাবিত মডেলটি অন্যান্য মেশিন লার্নিং মডেল এবং ক্লাসিক হাইড্রোলজিক্যাল মডেলের তুলনায় ক্রস-রিজিয়ন স্ট্রীমফ্লো বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে স্রোত প্রবাহের পূর্বাভাসে অত্যাধুনিক কর্মক্ষমতা অর্জন করেছে।
“স্রোতপ্রবাহ এবং বন্যার পূর্বাভাস জলবিদ্যায় দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি।”
সিএএস এক বিবৃতিতে বলেছে, বিশ্বজুড়ে ৯৫ শতাংশেরও বেশি ছোট ও মাঝারি আকারের অববাহিকার হাইড্রোলজিক্যাল রেকর্ড নেই। যার ফলে বৃষ্টিপাত এবং বন্যার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য যেসব মডেলের এই তথ্যের প্রয়োজন হয় সেসব মডেলের উপর নির্ভর করা যায় না।
গবেষকরা লিখেছেন, অনেক পূর্বাভাস মডেলের জন্য মানসম্পন্ন ঐতিহাসিক ডেটার প্রয়োজন হয়। এ থেকেই ভৌতিক পরামিতি বা ঐতিহাসিক ডেটা ছাড়া নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং তা বোঝা যায়।
সাম্প্রতিক কাজটিতে একটি প্রদত্ত অঞ্চলের পূর্বাভাসের উপরও ফোকাস করা হয়। এটি করা হয় স্থানীয় ডেটা ব্যবহার করে, যা বৈশ্বিক স্কেলে স্রোত প্রবাহের পূর্বাভাসের জন্য সর্বজনীন মূল্যায়ন নয়।
“জাতীয় বা আঞ্চলিক বন্যার পূর্বাভাস কৌশল তৈরির জন্য হাজার হাজার স্রোতপ্রবাহের পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করতে হয়, যেগুলোর শারীরিক প্যারামিটার বা ঐতিহাসিক রেকর্ড নেই।”
এটি অর্জনের জন্য গবেষকরা একটি মডেলের প্রস্তাব করেছে, শুধুমাত্র আবহাওয়া সংক্রান্ত ইনপুট, যেমন বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা, সেইসঙ্গে স্থির জমির বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে।
গবেষকরা বলেছে, স্থির বৈশিষ্ট্য, যেমন মাটির বৈশিষ্ট্য বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য স্যাটেলাইট ডেটা থেকে পাওয়া যেতে পারে।
গবেষকরা অন্যদের মডেলের তুলনায় তাদের মডেলের নির্ভুলতা পরীক্ষা করতে ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষণ ডেটা ব্যবহার করেছে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মধ্য ইউরোপ ও ব্রিটেনের ২ হাজারটিরও বেশি ক্যাচমেন্ট অন্তর্ভুক্ত।
এই মহাদেশ-স্তরের অঞ্চলগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন বায়ুপ্রবাহ, তাপমাত্রা, মাটির আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাতের ধরণ রয়েছে। যা গবেষকদের বিবেচনায় তাদের মডেল যাচাই করার জন্য যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় ছিল।
গবেষকরা লিখেছে, “প্রথমবারের মতো একাধিক হাইড্রোলজিক্যাল এআই মডেলকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে এবং বৈশ্বিক-স্কেলে তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রদান করা হয়েছিল।”
ওইয়াং চাওজুন বলেছেন, তাদের মডেলের মধ্যে স্থানিক বৈশিষ্ট্য এবং জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলো একটি সময়ক্রমে আলাদাভাবে প্রসেস করা হয়, যা অন্যান্য মডেলগুলো থেকে ভিন্ন। অন্যান্য মডেলগুলো একটি সামষ্টিক সূচক ব্যবহার করে যার ফলে সিমুলেশন ও ভবিষ্যদ্বাণীতে ভুল হয়।
তিনি বলেন, “অন্যান্য মডেলের তুলনায় ইডি-ডিএলএসটিএম ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষেত্রে উচ্চতর সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে।”
মডেলটির ভবিষ্যদ্বাণী ভারি বৃষ্টিপাত বা বেশি জল-প্রবাহ থাকা বেসিনে সবচেয়ে ভাল কাজ করেছে।
গবেষকরা বলেছে, পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, “মডেলটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেটে সর্বজনীন হাইড্রোলজিক্যাল আচরণ শিখতে পারে।”
“গবেষণাটি হাইড্রোলজিক তথ্যের সর্বব্যাপী অভাব এবং শারীরিক মডেল গঠন এবং প্যারামিটারাইজেশনের ঘাটতিগুলো কাটিয়ে উঠতে ডিপ লার্নিং পদ্ধতির সম্ভাবনা দেখায়।”
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট