টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর সমুদ্রের জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজারের পেকুয়ার ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৬ হাজার মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৫ একর ফসলি জমি।
পানির তোড়ে দুটি খালের চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় লোকালয়ে ঢুকছে পানি। তলিয়ে গেছে বেশ কিছু ধানের বীজতলা ও সবজি ক্ষেত।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সোমবার পেকুয়ার টইটং ইউনিয়নের মালগারা, আলেকদিয়া পাড়া, বটতলী, হাবির পাড়া, সোনাইয়া কাটা, শিলখালী ইউনিয়নের মাঝের ঘোনা, জারুলবনিয়া এবং পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পুর্ব মেহেরনামা, উজানটিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতাচুড়া কালার পাড়াসহ ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার মানুষ।
শিলখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, ইউনিয়নের প্রায় ১০টি ঘরের বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নামতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
টইটং ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল জলিল বলেন, টইটং ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তাতে অন্তত ২০০ ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৫০ বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ডুবে গেছে বেশ কিছু পুকুর ও মাছের ঘের।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে।
এরই প্রভাবে গত চারদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে কক্সবাজারে। শিলখালী ইউনিয়নের কাছাড়িমোড়া ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ ফরিদ বলেন, “টানা কয়দিনের ভারী বর্ষণে অসংখ্য বীজতলা ডুবে গেছে। অঙ্কুরোদগমের আগেই কিছু বীজে পচন ধরেছে। নতুন করে বীজ কিনে চাষবাসের সামর্থ্য অনেকের নেই। তাই চরম বিপাকে পড়েছে স্থানীয় চাষীরা।”
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাতেই বৃষ্টি হয়েছে ৩৫ মিলিমিটার।
এমন বৃষ্টিপাতের কারণে টইটং ইউনিয়নের প্রায় একশো ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান প্যানেল চেয়ারম্যান হাজী সাহাব উদ্দিন। পানির চাপে ভেঙ্গে গেছে ৮টি রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েছে ইউনিয়নের ৬ হাজার বাসিন্দা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাস্তাগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে তা করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
টইটংয়ে অন্তত ৪টি পয়েন্টে পাহাড়ি ছড়ার বাঁধ ভেঙে গেছে বলে জানান পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করার কথা আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে পানিবন্দী পরিবারকে দশ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”