টানা বর্ষণ, সেই সঙ্গে উজানের ঢল, তাতে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী এখন বড় ধরনের বন্যার কবলে।
গোমতী ও ফেনীসহ সাতটি নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়েছে বইছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এই দুই নদী উপচে পানি ঢুকছে কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ এলাকায়। ডুবেছে শহরসহ অনেক লোকালয়।
তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় এসব অঞ্চলে বৃষ্টি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ার আভাস রয়েছে। ফলে সিলেট অঞ্চলে বন্যার শঙ্কা থাকছে।
বর্ষা শেষে এখন বন্যা বাংলাদেশের মতো প্লাবন ভূমির দেশে স্বাভাবিক হলেও কুমিল্লা, নোয়াখালী কিংবা ফেনীতে নিকট অতীতে এমন বন্যা দেখা যায়নি।
কী কারণে এমন বন্যা- তার ব্যাখ্যায় বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃহস্পতিবার সকালের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রবল বৃষ্টিতে ত্রিপুরা এখন ভয়াবহ বন্যার কবলে। গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রিপুরার সুনামুরায় ২৬৯ মিলিমিটার এবং আগরতলায় ২৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ফেনী সীমান্তবর্তী বিলোনিয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৪২ মিলিমিটার। বন্যায় ত্রিপুরায় ১০ জনের মৃত্যুর খবরও এসেছে।
ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা বড় নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে গোমতী, মুহুরী ও ফেনী। গোমতী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় এবং মুহুরী ও ফেনী নদী ফেনী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
উজান থেকে আসা পানিতে এই নদীগুলো এখন উপচে পড়ছে। সেই সঙ্গে এখানেও হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১৮৮ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া নোয়াখালীতে ১৪৭ মিলি মিটার, চাঁদপুরে ১৪০ মিলিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, গোমতী, ফেনী, মুহুরী, হালদা, কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও খোয়াই নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
ফেনী নদী রামগড়ে বিপৎসীমার ২১৮ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে, গোমতী কুমিল্লায় বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে, খোয়াই হবিগঞ্জে বিপৎসীমার ২৭৬ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে, মনু মৌলভীবাজারে বিপৎসীমার ১১৫ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে, কুশিয়ারা সিলেটের অমলশীদে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে বইছে।
কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এই পাঁচটি জেলাকে এখন বন্যাকবলিত বলে দেখাচ্ছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ্ হিসাবে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর না থাকলেও সেখানেও জেলা শহর, মহাসড়কসহ অনেক এলাকা এখন পানির নিচে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাতে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উজানে ভারি বৃষ্টির প্রবণতা কমতে পারে। তাহলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে মুহুরী, ফেনী, গোমতী ও হালদার পানি আপাতত বাড়বে না, বরং ধীরে ধীরে কমতে পারে।
দেশের অন্য অববাহিকার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানির সমতল কমছে। পদ্মা নদীর পানির সমতল রয়েছে স্থিতিশীল।
তবে সিলেট অঞ্চলে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ত্রিপুরায় ভারি বর্ষণ যেমন কুমিল্লা, ফেনীর বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; তেমনি আসামে ভারি বর্ষণ হলে ভুগতে হয় সিলেট, সুনামগঞ্জকে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টির প্রবণতা ধীরে ধীরে কমবে।