বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষক, পেশাজীবীসহ নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আকার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ কোটি টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্কুলার জারি করে তহবিলের আকার বাড়ানোর কথা জানানো হয়।
এই তহবিলের ২৫ শতাংশ নারীদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। তৃতীয় লিঙ্গের গ্রাহকরাও এই ঋণ সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সার্কুলারে বলা হয়, সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মোট ২৭টি জেলাসহ অন্যান্য বন্যাদুর্গত এলাকার জনগণকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ সুবিধা দিতে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা নারীদের জন্য ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতার পথ সুগম রাখা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণ; সর্বোপরি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে চলমান রাখার লক্ষ্যে ওই তহবিলের পরিমাণ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জেলাগুলো হলো- ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নেত্রকোনা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের অধীনে ঋণ সুবিধা পেতে গ্রাহকদের ব্যাংকে ১০, ৫০ বা ১০০ টাকার হিসাব থাকতে হবে। হিসাব না থাকলে নতুন করে হিসাব খুলতে হবে।
পাড়া, মহল্লা বা গ্রামভিত্তিক ক্ষুদ্র বা অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী যেমন, চর্মকার, স্বর্ণকার, ক্ষৌরকার, কামার, কুমার, জেলে, দর্জি, হকার বা ফেরিওয়ালা, রিক্সাচালক/ভ্যানচালক, ইলেক্ট্রিক বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র মেরামতকারী, ইলেক্ট্রিশিয়ান, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রী, রংমিস্ত্রী, গ্রিলমিস্ত্রী, প্লাম্বার, আচার বা পিঠা প্রস্তুতকারী, ক্ষুদ্র তাঁতী, পশু চিকিৎসক প্রভৃতি পেশার জনগোষ্ঠী এই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারবে।
আয় উৎসারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি যেমন- মুদি ও মনোহরী পণ্যের দোকানি, ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকানি, ফ্লেক্সিলোড সেবা প্রদানকারী বা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এজেন্ট, তথ্য সেবা প্রদানকারী বা ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী, ভাসমান খাবারের দোকানি ও চা-পান বিক্রেতারা এ ঋণ সুবিধার আওতাভুক্ত।
এছাড়া বই/পত্রিকা/ম্যাগাজিন বিক্রেতা, ঠোঙা/মোড়ক প্রস্তুতকারী, ফুল/ফল/শাক-সবজি বিক্রেতা, হাঁস/মুরগী/কবুতর/কোয়েল পালনকারী, গরু/ছাগল/ভেড়া প্রভৃতি গবাদিপশু পালনকারী, চিংড়ি/মৎস্য/কাঁকড়া/কুঁচে চাষী, কেঁচো সারসহ যেকোনো জৈবসার উৎপাদনকারী, সবজি চাষী, উদ্যোক্তা-নার্সারি/বৃক্ষরোপণ, সূঁচিশিল্প, ব্লক-বাটিক, ক্ষুদ্র/কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, কনফেকশনারিসহ অন্যান্য খাবার প্রস্তুতকরণ ও অন্য যেকোনো সম্ভাবনাময় উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে জড়িতরাও এ তহবিল থেকে পাবেন।
এ তহবিল থেকে একজন গ্রাহক এককভাবে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারে। গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে ২-৫ জন গ্রাহক ঋণ পেতে পারে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ১ শতাংশ সুদে এই ঋণের অর্থ যোগান দেবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক তার গ্রাহকের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। তখন তহবিলের আকার ছিল ২০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে ওই তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি টাকা করা হয়।