আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর নিম্নঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
রবিবার সকালে এক বুলেটিনে সংস্থাটি জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে, তবে কোনও কোনও স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে।
কয়েকদিনের টানা প্রবল বৃষ্টি ও উজানে ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ফেনীসহ দেশের ১২ জেলায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। তবে বৃষ্টি কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের শনিবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৫৪৮টি পরিবারের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে। এছাড়া বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে।
এতে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদী সমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে।
তবে উল্লেখিত সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়েছে, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরি, কর্ণফুলি, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল সময়বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল কমছে এবং গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টাঅব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল আছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই নদীসমূহের স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।
বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দেশের ৪টি নদীর পানি ৬টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের অমলশীদ, শেরপুর-সিলেট ও সুনামগঞ্জের মারকুলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্য নদীগুলোর মধ্যে মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার পয়েন্টে, গোমতী নদীর পানি কুমিল্লা পয়েন্টে ও মুহুরী নদীর পানি ফেনীর পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
তবে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই চার নদীর সবগুলোতেই গত ২৪ ঘণ্টায় পানির প্রবাহ কমেছে।
বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের খুলনায় ১৫০ মিলিমিটার, সিরাজগঞ্জ ১২৩ মিলিমিটার, বান্দরবানের লামায় ৯১ মিলিমিটার, পটুয়াখালীতে ৬৯ মিলিমিটার, কক্সবাজারের টেকনাফে ৭২ মিলিমিটার, বরিশালে ৬৯ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ৬৪ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জের মহেশখালীতে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
একই সময়ে ভারতের আসামের সিলচরে ৩৩ মিলিমিটার, মিজোরামের আইজলে ১৭ মিলিমিটার ও মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।