Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোণায় বন্যার অবনতির শঙ্কা

সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা।
সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকা।
[publishpress_authors_box]

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টির আভাস পাওয়া গেছে। এতে এসব অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে পারে, যে কারণে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আর কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, রংপুরের কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। 

দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা সর্ম্পকিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টায় অব্যাহতভাবে বেড়ে কয়েকটি পয়েন্টে সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। আর গঙ্গা, পদ্মার পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা নদী ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি বাড়ছে।

বন্যা তথ্য কেন্দ্র বলছে, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। ফলে এ সময় নেত্রকোনা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। তবে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা তথ্য কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বাড়তে পারে। আর কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, রংপুর জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সমুদ্রে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তায় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণে কয়েক দিন ধরে অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার (১৮ জুন) ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, সেই মৌসুমি বায়ু ফের সক্রিয়; আর এর প্রভাবে দেশের কয়েকটি বিভাগে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।

পরের দিন বুধবার (১৯ জুন) খানিক বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ঢাকাবাসীকে।

তবে বাতাসে একইসঙ্গে আর্দ্রতা থাকায় ভ্যাপসা গরমও বাড়তে পারে বলে বুধবার জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেইসঙ্গে ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।

তবে বৃষ্টি ঢাকায় স্বস্তির হলেও দেশের অন্যান্য অংশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি করেছে। আবার কোথাও কোথাও স্বল্পমেয়াদি বন্যারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সেইসঙ্গে সমুন্দ্রে ৩ নম্বর আর নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্য এলাকায় মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।

“এ সময় সাগরে বজ্রঝড়, বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এজন্য সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।”

এ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর উপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বুধবার রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়ার পূর্বাবাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

টানা ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উত্তরাঞ্চলের চার জেলায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তিস্তাসহ প্রধান নদ-নদীর পানি কয়েকটি স্থানে বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টির আভাস থাকায় রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম—এই তিন জেলার কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে নীলফামারীতে পানির প্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। যেমন- রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার বেলা ১১টায় কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সেখানে বুধবার রাতের মধ্যে পানি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় তিস্তার পানি আরও বাড়তে পারে।

রংপুর পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি বাড়ার আশঙ্কায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, দেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবননিতে দুর্ভোগ বেড়েছে। সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে বিয়ানীবাজারে ১৬টি, কানাইঘাটে ১২, গোলাপগঞ্জে ১২, জকিগঞ্জে ১০, গোয়াইনঘাটে ১০, কোম্পানীগঞ্জে ১০, বিশ্বনাথে ৯, সিলেট সদরে ৯, দক্ষিণ সুরমায় ৯, ওসমানীনগরে ৯, বালাগঞ্জে ৬, ফেঞ্চুগঞ্জে ৬ ও জৈন্তাপুরে ৬টি মেডিকেল টিম গঠিত হয়েছে। এছাড়া জেলা পর্যায়ে আরও দুটি মেডিকেল টিম করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সবখানে মেডিকেল টিমগুলো পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ প্রসূতিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, পানিবাহিত রোগসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে।

এর আগে গত ২৯ মে ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। গত ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সর্বশেষ গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টিতে ফের জেলাটিতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। 

সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন জেলার অন্তত ১৬ লাখ মানুষ। 

দেশের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে থাকায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত