দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয়ে বৃষ্টির মাত্রা কমে এসেছে। কুশিয়ারা ও গোমতী ছাড়া দেশের সব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনীসহ আশপাশের অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সোমবার সকাল ৯টায় তাদের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায় ভারতের ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা রাজ্যের নদী অববাহিকায় খুব একটা বৃষ্টি হয়নি। এসব অঞ্চলের উজানে নদ-নদীর পানি কমে আসছে। ফলে ফেনী ও কুমিল্লা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
এছাড়া মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর পানিও বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। পাশাপাশি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এতে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধোলাই নদীর পানি কমতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে বুলেটিনে।
অতি ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে গত ২০ আগস্ট থেকে ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রবিবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ১১ জেলার ৭৭ উপজেলার ৫৪৫টি ইউনিয়নের ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের।
কুমিল্লা ও ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হবে পারে জানিয়ে সোমবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তবে এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি কমে আসতে পারে। সে কারণে এখানকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সেইসঙ্গে ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে পারে। তবে এ জেলার কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অবশ্য আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ এবং এর সংলগ্ন উজানে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, এর ফলে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি,কক্সবাজার,চট্টগ্রামজেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদাসহ অন্যান্য নদীর পানি সময় বিশেষে বাড়তে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারার পানি কমে আসছে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। উত্তরাঞ্চলের দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি স্বাভাবিক প্রবাহ রয়েছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
বুলেটিনে আরও জানানো হয়, সোমবার সকালে দুটি নদী– কুশিয়ারা ও গোমতীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছিল। এরমধ্যে সিলেটের অমলশীদে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে। সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে যশোরে ১৪৪ মিলিমিটার। এ সময় চট্টগ্রামে ৬৫, খুলনায় ৭২ এবং বরিশাল জেলায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।