দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহে প্রবাহিত পানির স্তর কমছে।
এর সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকায় দেশে সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
টানা বর্ষণ, সেই সঙ্গে উজানের ঢলে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনী এখন বড় ধরনের বন্যার কবলে।
শুক্রবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই মুহূর্তে দেশের ১১টি জেলা বন্যাকবলিত। এসব জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। পানিবন্দি আছে ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবারের মানুষ। বন্যায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
দেশের নদ-নদী ও বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে শুক্রবার এক বুলেটিনে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল ধীর গতিতে কমছে।
বুলেটিনে বলা হয়, বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল কমতে শুরু করেছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীর গতিতে উন্নতি হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাত দিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদী সমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়, এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানির সমতল কমছে, অপরদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে বলে বুলেটিনে আভাস দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কমছে জানিয়ে বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই সকল নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে।
প্রবল বৃষ্টির কারণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে ও ভূমিধসে সেখানে এ পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রিপুরার সুনামুরায় ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় যার পরিমাণ ছিল ২৬৯ মিলিমিটার।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৬৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া কক্সবাজারে ১৫১ মিলিমিটার, রাঙামাটিতে ৯৭ মিলিমিটার ও চট্টগ্রামে ৮৭ মিলিমিটার, নোয়াখালীর মাইজীকোর্টে ৭৩ মিলিমিটার ও লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।