চিকিৎসকরা বললেন, এখনই ডিম্বাণু হিমাগারে জমা রাখা জরুরি। এই কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন হলিউড তারকা ফ্লোরেন্স পিউ। কারণ তখন তার মোটে ২৭ বছর বয়স।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওস) আর এন্ডোমেট্রিওসিস দুটো অসুখই বাসা বেঁধেছে এই অভিনেত্রীর শরীরে।
এখন ২৮ বছর বয়সে সেসব কথা মন খুলে বলছেন ফ্লোরেন্স পিউ।
এই দুই অসুখ থেকে প্রজনন সক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, এমন আগাম হুঁশিয়ারিই তাকে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
‘ওপেনহাইমার’, ‘ডুন: পার্ট টু’, ‘লিটল উইমেন’ তারকা পিউ এসব শুনেই খানিক অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন।
“গত গ্রীষ্মটা আমি বেশ দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি। তখন আমি ভেবেছিলাম একবার গিয়ে নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেব। এটা না হলে হয়তো আর পাঁচ বছরের মধ্যে সন্তান নিতে গিয়ে এসব কিছু জানতে হতো।”
১৯ নভেম্বর ‘শি এমডি’ শিরোনামের প্রায় সাড়ে ৪৪ মিনিটের পডকাস্টে মনের কথা খুলে বলেন পিউ।
এই পডকাস্ট সঞ্চালনা করেছেন ম্যারি অ্যালিস এবং গাইনকোলজিকাল সার্জন ড. থাইস আলিয়াবাদি।
এই থাইস আলিয়াবাদির কাছেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন পিউ।
আলিয়াবাদি তখন পিউকে প্রশ্ন করেছিলেন, আগে কি কখনও ডিম্বাণুর সংখ্যা পরীক্ষা করেছিলেন?
এমন প্রশ্ন খুব অদ্ভুত বলে মনে করেছিলেন পিউ।
“আমার পরিবার তো সন্তান উৎপাদনের কারখানা। আমার মায়ের সন্তান হয়েছিল চল্লিশে। আমার নানি … তার তো অনেক সন্তান। আমার কখনই মনে হয়নি আমি এদের মতো হতে পারব না।”
হরমোনজনিত অসুখ পিসিওএস নিয়ে সামান্যই জানতেন ফ্লোরেন্স পিউ। আগে তার কখনও মনে হয়নি, হুট করে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভবিষ্যতের বড় একটি সিদ্ধান্তের জন্য এখন থেকেই সাবধান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পিউ বলেন, “এরপর … ২৭ বছর বয়সে আমি নতুন কিছু জানলাম। বলা হলো, আমার ডিম্বাণু জমা রাখতে হবে এবং এসব দ্রুতই করতে হবে।
“তবে যখন জরুরি তখনই জানতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের বলতে হবে। কারণ আমি তো ছোটবেলা থেকে সন্তান নেয়ার কথা ভাবতাম।”
জরায়ুর ভেতরের একটি ঝিল্লি বা স্তরকে এন্ডোমেট্রিয়াম বলে। প্রতি মাসে এই এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরটি পুরু হয়; যা সন্তান ধারণের উপযোগী। তবে গর্ভধারণ না হলে এই স্তর খসে যায়।
এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ হলে জরায়ুর ভেতরের দেয়াল তথা এন্ডোমেট্রিয়াম দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালী, মূত্রথলি, মলাশয়, খাদ্যনালী, মলাশয়ের পেছনের অংশ পর্যন্ত বাড়তে থাকে। এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ ডিম্বস্ফুটনে বাধা হয়ে ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১১ শতাংশ এই রোগে ভুগছে।
ইউনিস কেনেডি শ্রাইভার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বলছে, পিসিওএস হলে মাসিক চক্রে রদবদল দেখা দেয়, ত্বকে বা শরীরের লোম ও ব্রণ দেখা দিতে পারে, ডিম্বাশয় অস্বাভাবিক রকম বেড়ে যেতে পারে এবং গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দেয়।
বিশ্বে ৮ থেকে ১৩ শতাংশ প্রজনন সক্ষম নারী ও মেয়ে এমন সমস্যায় ভোগে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ধারণা করা যায়, পিসিওস আক্রান্ত ৭০ শতাংশ নারী শনাক্তের বাইরেই রয়ে গেছেন।
আর এ কারণেই নিজের অসুখের কথা প্রকাশ্যে আনলেন পিউ। তার প্রত্যাশা, এতে করে অনেক নারীর মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।
“এসব নিয়ে কথা বলতে না পেরে আমার খুব হতাশ লাগতো। আমার ভেবে মন খারাপ হয় যারা নিজের মধ্যে বাস করা এই অসুখটি নিয়ে অনেক দেরিতে অবগত হবে। হয়তো তারা ৩০ বছর বয়সে সন্তান নিতে গিয়ে জানতে পারবে এসব সমস্যার কথা; যদিও পেছনের ১০টি বছর তাদের চমৎকার কেটে গেছে।”
“আমার তো মনে হয় প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকেই এসব নিয়ে আমাদের কথা বলা দরকার; অথবা যখন থেকে আমাদের যৌনজীবন শুরু হয়। কোনো রকম ধারণা ছাড়াই দিনের পর দিন পেরিয়ে তারপর হঠাৎ একদিন এমন রোগ নিয়ে জানা একেবারেই বোকামি।”
এই বছর টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তির পর প্রশংসিত হয়েছে ‘উই লিভ ইন টাইম’। এই রোমান্টিক কমেডি সিনেমায় জুটি হয়েছেন অ্যান্ড্রু গারফিল্ড ও ফ্লোরেন্স পিউ। ২০২৫ সালে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘থান্ডারবোল্ট’ দিয়ে আবারও মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সে ফিরতে চলেছেন এই ব্রিটিশ অভিনেত্রী।