Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

‘মায়ে কইছে আইজ ফুল বেইচ্চ্যা বেশি লাভ, তাই ভিক্ষা বাদ’

ফুল
প্রতিদিন এই সিগন্যালে ভিক্ষা করলেও বুধবার ফুল বিক্রি করতে বেরিয়েছিল শিশুটি। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

“মায়ে কইছে আইজ ফুল বেইচ্চ্যা বেশি লাভ। তাই ভিক্ষা বাদ দিয়ে ফুল বেচতাছি। সকাল থাইক্যা ৭০০ ট্যাকার বেশি ফুল বেচছি।”

বুধবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর মোড়ে ফুল বিক্রি করতে করতে এভাবেই নিজের কথা বলছিল সাদিয়া আক্তার। ৯ বছর বয়সী সাদিয়া প্রতিদিন ভিক্ষা করলেও বুধবার মায়ের পরামর্শে ফুল নিয়ে বের হয়। ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বালতিতে গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুল বিক্রি করছিল সাদিয়া। প্রতিটি গোলাপ ৩০ আর রজনীগন্ধার স্টিক ২০ টাকায় বিক্রি করছিল সে।

শুধু সাদিয়া নয়, তার মতো অনেককেই বুধবার ফুল বিক্রি করতে দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ঘুরতে বের হওয়া মানুষের কাছে ভিক্ষা না চেয়ে ফুল কেনার আবদার জানিয়েছে তারা। অনেক হকারও বুধবার বের হন ফুল নিয়ে, যারা অন্যান্য দিন বিক্রি করতেন মাস্ক, পানি বা অন্য কিছু।      

মাঝবয়সী হনুফা বেগম অনেক দিন ধরে বিজয় সরণি সিগন্যালে হকারি করেন। বছরের অন্যান্য দিন তোয়ালে, আচার বা পানি বিক্রি করলেও বুধবার তার হাতে ছিল ফুলের তোড়া। সিগন্যালে লাল বাতি জ্বললেই থেমে থাকা গাড়ির পাশে ফুল নিয়ে ছুটে যাচ্ছিলেন তিনি।

আর ফুল বিক্রির এই কাজে তাকে সাহায্য করছিল ৭ বছরের মেয়ে শাকিলা। মা যখন ফুল নিয়ে রাস্তায় ছুটে যাচ্ছিলেন তখন ফুটপাতে রাখা ফুল সামলে রাখছিল শিশুটি। কখনও কখনও ফুল গুছিয়েও দিচ্ছিল মাকে।

হনুফা বলেন, “আজ সবাই ফুল কেনে। তাই আর অন্য জিনিস নিয়ে বের হইনি। ৫ হাজার টাকার ফুল আনছিলাম শাহবাগ থেকে, তার মধ্যে অর্ধেকের বেশিই বিক্রি হয়ে গেছে।”

হনুফার সঙ্গে কথা বলার সময় তার কাছ থেকে ফুল কিনছিলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম। বন্ধুকে নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘুরতে যাচ্ছিলেন তিনি।

তাজুল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আজ ফুলের দাম অনেক বেশি। দোকানে একটি গোলাপই চাচ্ছে ১০০ টাকা। কিন্তু এখান থেকে ৪০ টাকায় পেলাম। কম দামে পাওয়ায় ফুটপাত থেকেই কিনে নিলাম ফুল।”  

চন্দ্রিমা উদ্যানের সিগন্যালে ফুল বিক্রি করছিল ১১ বছর বয়সী লুতফা। বুধবার সন্ধ্যায় সকাল সন্ধ্যাকে এই শিশু জানায়, অনেকদিন ধরেই চন্দ্রিমা উদ্যানে ফুল বিক্রি করছে। অন্য দিন ৪০০-৫০০ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারলেও বুধবার বিক্রি করেছে ১১০০ টাকার ফুল।

১৪২৬ বঙ্গাব্দ থেকে সরকারিভাবে নতুন পঞ্জিকা অনুসরণ করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে যে ছুটির তালিকা প্রকাশ করে, তাতে বাংলা বর্ষপঞ্জির নতুন তারিখগুলো উল্লেখ করা হয়। এরপর থেকে পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের তারিখ এক হয়ে যায়। এই দুই উৎসবের সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে সরস্বতী পূজাও।

তাই অন্যান্য বারের তুলনায় এবার ফুলের চাহিদাও অনেক বেশি বলে জানাল শ্যামলীর রিং রোডের ফুল ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এমনিতেই যে পরিমাণ ফুল বিক্রি হয় আজকের দিনে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চাহিদার কারণে ফুলের দামও অনেক বাড়ে। এবার যুক্ত হয়েছে সরস্বতী পূজাও।

“তাই বেশি লাভের আশায় ভিক্ষুক-হকাররাও ফুল বেচছেন। তাদের কেউ দোকান থেকে ফুল কিনে এনে বিক্রি করছেন। কেউবা দোকানদারদের ফুল কমিশনে বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রতিটি ফুল বিক্রিতে তাদেরকে ২-৫ টাকা করে কমিশন দিতে হয়।” 

ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি শ্রী বাবুল প্রসাদ বলেন, “বছরের অন্যান্য দিনে শাহবাগে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়।

“তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি এলে ফুলের বিক্রি ৪-৫ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। চাহিদার কারণে অনেক মৌসুমী ব্যবসায়ী বা হকার, বা অন্য পেশার মানুষও অন্যান্য জিনিস রেখে ফুল বিক্রি করেন এই দিনে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত