উত্তরবঙ্গের কোন ব্যবসায়ী বেশি দামে ধান বিক্রি করেছেন তাকে কুষ্টিয়ায় বসে হাতকড়া পরাতে না পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বুধবার বিকালে দেশের অন্যতম মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এই চ্যালেঞ্জ জানান তিনি।
নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার এবারও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। বাংলাদেশে চালের সরবরাহ যে কয়েকটি স্থান থেকে হয়, তার বড় দুটি কেন্দ্র কুষ্টিয়া আর নওগাঁ। এখনকার দাম বৃদ্ধির জন্য কুষ্টিয়ার মোকাম মালিকরা দায়ী করছেন নওগাঁকে; আবার সেই অভিযোগ অস্বীকার করছেন নওগাঁর মোকাম মালিকরা।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বুধবার খাজানগরের চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায়ও প্রসঙ্গটি আসে।
সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “ধান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হাতে গোনা কয়েক জেলার ব্যবসায়ীরা। আমরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
মিল মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিবেক জাগ্রত করুন। বেপরোয়া না হয়ে মানব সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করুন।”
খাদ্যমন্ত্রী জানান, চালের দাম বৃদ্ধির কারসাজিতে জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। দরকার পড়লে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করবে সরকার।
চালের বাজার নয় মাস স্থির ছিল জানিয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, করোনা অতিমারিতেও চালের দাম বাড়েনি। এখন বাড়ছে কেন- মিল মালিকদের কাছে এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মন্ত্রীর এ প্রশ্নের উত্তরে চালকল মালিকরা বলেন, চিকন ধানের দাম বেড়ে গেছে। এ ধানের প্রধান মোকাম নওগাঁসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বর্তমানে ১৫৭০ টাকা মণ দরে এ ধান কিনতে হচ্ছে।
এ সময় মন্ত্রী চালকল মালিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের কোন মোকাম থেকে ১৫৭০ টাকা মণ ধান কিনছেন, সেই বিক্রেতার নাম বলুন, আমি এখানে বসে যদি তার হাতে হাতকড়া পরাতে না পারি তাহলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।”
মন্ত্রীর এই চ্যালেঞ্জে নিশ্চুপ থাকেন চালকল মালিকরা। এ সময় মন্ত্রী মিল গেটে মিনিকেট চালের দাম ১ টাকা কমিয়ে ৬১ টাকার করার প্রস্তাব দিলেও ব্যবসায়ীরা সাড়া দেননি।
সাধন চন্দ্র মজুমদার তখন বলেন, “কৃষক ধানের দাম বেশি পেলে খুশি হতাম। এখন বেশি দামে ধান বিক্রি হলেও কৃষকের লাভ হচ্ছে না। সুবিধা নিচ্ছে মজুতদাররা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, বস্তায় মিলগেটে চালের দাম কত তা লিখতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে উৎপাদনের তারিখও। নতুন আইন করা হয়েছে। দ্রুত কার্যকর হবে। এ আইন কার্যকর হলে মিনিকেট নামের কোনও ধান চাল থাকবে না।
সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর সঙ্গেও বাদানুবাদে জড়ান চালকল মালিকরা। আজগর আলি বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, “চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।” তার এ বক্তব্যের পর সব চালকল মালিক একসঙ্গে হৈ চৈ শুরু করেন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজার সভাপতিত্বে সভায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বক্তব্য দেন।
হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষপাটে এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে যান খাদ্যমন্ত্রী। এ সময় একটি মিলের গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ পান তিনি। সুবর্ণা অটো রাইস মিলের মালিক জিন্নাহ আলম অন্য একটি মিলের গুদামে অবৈধভাবে এ ধান মজুদ করেছিলেন।
মন্ত্রীর নির্দেশে তাৎক্ষণিক গুদামটি সিলগালা করা হয়। এছাড়া একই ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি আটা মিলের গুদামে ১৫০ টন গমের অবৈধ মজুদ পেয়ে সেটিও সিলগালার নির্দেশ তিনি।
মন্ত্রী এদিন পর্যায়ক্রমে খাজানগর মোকামের অন্যতম মিনিকেট চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেশ এগ্রো ফুড, সুবর্ণা অটো রাইস মিল, স্বর্ণা এগ্রো ফুড, আল্লার দান এগ্রো ও রশিদ এগ্রো ফুডে যান। এসব চালকল ও এগুলোর গুদাম ঘুরে দেখেন তিনি। প্রায় প্রতিটি মিলেই কিছু না কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পান মন্ত্রী।
এর মধ্যে আল্লার দান এগ্রো ফুডের এক গুদামে প্রায় ৪০০ টন ধানের মজুদ পান তিনি। পরে জানা যায়, ওই ধানের মালিক সুর্বণা এগ্রো ফুডের মালিক জিন্নাহ আলম। ৪০০ টন ধান ও ১৫০ টন গম মজুদ করায় জিন্নাহ আলমকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।