ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা থেকে অতি ভারি বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কুতুবদিয়ায়। সেখানে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এরপরেই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় সাতক্ষীরায় ৯৩ মিলিমিটার।
ঘূর্ণিঝড়টি খেপুপাড়ার উপর দিয়ে গেলেও গত চব্বিশ ঘণ্টায় সেখানে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত পূর্বাভাসে বলা হয়, রেমাল যশোর ও এর আশেপাশের এলাকায় স্থল গভীর নিম্নচাপ হিসাবে অবস্থান করে আরও উত্তরপূর্বে এগিয়ে বৃষ্টি ঝড়িয়ে দুর্বল হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
সোমবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, মংমনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো বাতাসসহ হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে হতে পারে বজ্রপাত।
এসময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
মঙ্গলবারও এসব বিভাগে অস্থায়ীভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বুধবারও একই অবস্থা চলবে। তবে সেদিন থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
পরের পাঁচদিন তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়বে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারে ৩০ গ্রাম প্লাবিত
কক্সবাজার থেকে সকাল সন্ধ্যার আঞ্চলিক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার রাত থেকে কক্সবাজারে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টি সোমবার বেলা ১২টায় অব্যাহত রয়েছে। থেমে থেমে চলা এ ভারি বর্ষণের সঙ্গে ঝোড়ো হওয়া ও বজ্রপাতও হচ্ছে। ভারি বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হলেও ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজার ও আশপাশের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপ সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, সোমবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। আগামী আরও ২/৩ একই ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ফলে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি জানান, সাগরের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে এখনও ২ ফুট উচ্চতা বেড়ে রয়েছে। ফলে সাগর তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে।
বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধি। এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরাটেক, কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া, মোস্তাকপাড়া, ফদনার ডেইল, নুনিয়ারছড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলাঘাটা ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপকূলের লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। যাদের রান্না করা খাবার বিতরণ করছে প্রশাসন।
এদিকে, ভূমিধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানিয়েছেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদ আশ্রয় নিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জনপ্রতিনিধি কাজ করছেন। সহজে নিরাপদে আশ্রয় না নিলে জোরপূর্বক সরানো হবে।