Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

সাত মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় বেড়েছে ৩.২৬ শতাংশ   

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
Picture of আবদুর রহিম হারমাছি

আবদুর রহিম হারমাছি

[publishpress_authors_box]

চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বিদেশি ঋণ ছাড় ও প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বেড়েছে পরিশোধের চাপও।

এই সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৪৪০ কোটি (৪.৪০ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।

এরমধ্যে ১২৪ কোটি ১১ লাখ ডলারই দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। মোট ঋণ-সহায়তার ২৮ দশমিক ২২ শতাংশই দিয়েছে সংস্থাটি।

আরেক উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিয়েছে ৮৮ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ৭৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রবিবার বিদেশি ঋণের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে মোট ৪৩৯ কোটি ৮৪ লাখ (৪.৪০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে। এর মধ্যে ১৮৫ কোটি ৬৭ লাখ (১.৮৫ বিলিয়ন) ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।

হিসাব বলছে, মোট ঋণ-সহায়তার ৪২ দশমিক ২১ শতাংশ চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। সুদ ৭৬ কোটি ৭ লাখ ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সাত মাসে মোট ৪২৫ কোটি ৯৫ লাখ (৪.২৫ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরমধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ৯১ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।

গত বছরের শুরু থেকে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে তা কিছুটা কমে যায়। তবে ডিসেম্বরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড় করে দাতারা। এতে সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে বিদেশি ঋণ-সহায়তা।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।

প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪ গুণ

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৭১৭ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার (৭.১৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল মাত্র ১৭৬ কোটি ৫৭ লাখ ৭০ হাজার (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই সাত মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দাতাদের ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৪ গুণ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে, তারমধ্যে ৪২১ কোটি ৩৬ লাখ (৪.২১ বিলিয়ন) ডলার প্রকল্প ঋণ। আর ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার অনুদান। অনুদানের মধ্যে ১৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার প্রকল্প সহায়তা। আর ১ কোটি ৫ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা।

সংকট কাটাতে আরও ঋণ প্রয়োজন

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাপ সামাল দিতে আরও বেশি বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

সকাল সন্ধাকে তিনি বলেন, “স্বস্তির খবর এই যে, গত ডিসেম্বরে আইএমএফ, এডিবি ও কোরিয়ার ঋণ পাওয়ায় বিদেশি ঋণ সহায়তা বেড়েছে। অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে ফরেন এইড ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। ছয় মাস শেষে তা ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। সাত মাস শেষে আরও খানিকটা বেড়েছে।”

“এতে রিজার্ভের পতন ঠেকানো গিয়েছিল। তা না হলে রিজার্ভ আরও কমে যেত। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কিন্তু আবার ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে।

“তাই রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে আরও ঋণ-সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোরাল পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে।”

সংকট কাটাতে কম সুদের আরও বিদেশি ঋণ এখন খুবই প্রয়োজন বলে মনে করেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

কোভিড-১৯ অতিমারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু সেই জোয়ার আর থাকেনি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সেই নেতিবাচক ধারা নিয়েই ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত