Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
কোটাবিরোধী আন্দোলন

আগেই দুজনের ‍মৃত্যুর তথ্য যুক্তরাষ্ট্র কোত্থেকে পেল, প্রশ্ন বাংলাদেশের

হামলার শিকার হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য’র বাসভবনের উল্টোপাশে ফুলার রোডে যাবার পথ ধরে দৌড়ে পালাচ্ছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
হামলার শিকার হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য’র বাসভবনের উল্টোপাশে ফুলার রোডে যাবার পথ ধরে দৌড়ে পালাচ্ছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

ওয়াশিংটনে সোমবারের এই ব্রিফিংয়ে এই আন্দোলনে দুজন নিহত হওয়ার যে তথ্য দিয়েছে, তার উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় এক ‍বিবৃতিতে এই প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বক্তব্যে আমরা অত্যন্ত হতাশ।

“মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ওয়াশিংটনে গতকাল (সোমবার) দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য দি‌য়ে‌ছেন, এটা ভিত্তিহীন। এমন ভিত্তিহীন, অযাচাইকৃত তথ্যের ব্যবহার সহিংসতা বাড়াতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করতে পারে।”

সোমবার ওয়াশিংটনে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রসঙ্গটি আসে। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, “আমরা ঢাকা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের খবর সম্পর্কে অবগত এবং সেগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। এসব বিক্ষোভে দুজন নিহত এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।”

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে এমাসের শুরু থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে রাজপথে আন্দোলনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলন একদিন আগেই সহিংসতায় গড়ায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেধড়ক পিটুনির শিকার হন আন্দোলনকারীরা। সেখানে বহু আহত হলেও কারও নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

তবে ওয়াশিংটন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য এবং ঢাকা থেকে প্রতিবাদ জানানোর মধ্যে রবিবার ব্যাপক সহিংসতা হয়। তাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে অন্তত ছয়জন নিহত হয়।

ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, “স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ এবং শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হওয়ার অধিকার হলো যেকোনও সফল গণতন্ত্রের ভিত্তি। আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর যেকোনও ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই। আমাদের সহানুভূতি তাদের সঙ্গে যারা এই সহিংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”

তবে তার দেওয়া ‘ভিত্তিহীন’ তথ্য মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় অন্তরায় হচ্ছে বলে ইঙ্গিত করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।

এতে বলা হয়, “অহিংস প্রতিবাদ বা আন্দোলনের অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। বাংলা‌দেশ সরকার সেই অধিকার সমুন্নত রাখতে অবিচল।

“গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে সহিংসতার কোনও স্থান নেই। সম্প্রতি সা‌বেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ধরনের সহিংসতা মূল্যবোধ বি‌রোধী।”

বাংলাদেশ সরকার দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ, বিবৃতিতে সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীরা মঙ্গলবার মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

অ্যামনেস্টির নিন্দা

ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর সোমবারের হামলার নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া শাখার ফেইসবুক পাতায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, “আন্তর্জাতিক আইন ও নিজস্ব সংবিধানের মেনে মানুষের মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের প্রতি সম্মান এবং পরবর্তী কোনও ক্ষতি থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের রক্ষার বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশের মেনে চলা উচিৎ।

“সময়ক্ষেপণ না করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা ও আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন আন্দোলনে সরকার সমর্খকদের হামলার ঘটনার সঙ্গে এবারের ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বেসামরিক পোশাকে কিছু ব্যক্তি হাতুড়ি, লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভে বাধা দিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের মারধর করেছে।

ঢাকা কলেজের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে।

সংকট সমাধানে টিআইবির বিবৃতি

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির পাশাপাশি চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত সমাধান নিশ্চিতের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সোমবারের হামলা এবং মঙ্গলবার নিহতের ঘটনা তুলে ধরে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এই হামলা ও মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত, ক্ষুব্ধ, হতাশ। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দলমত নির্বিশেষে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।”

সরকার কোনও অবস্থাতেই সংঘাত উসকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের পথে হাঁটবে না বলে আশা করছে টিআইবি।

কোটা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের যৌক্তিক, শান্তিপূর্ণ ও সংবিধানসম্মত সমাধান দ্রুত করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব পক্ষকেই সংযত ও যৌক্তিক আচরণ করার আহ্বানও জানিয়েছে তারা।

কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের পর থেকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোটা নিয়ে সংকটের সমাধান আদালতেই হবে। তবে আন্দোলনকারীরা তা মানতে নারাজ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত