Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে

ডলার
[publishpress_authors_box]

দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাজে আসছে না, ফলে বাড়ছে আরও উদ্বেগ।

রিজার্ভ ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বিদেশি মুদ্রার অন্যতম প্রধান উৎস প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি আসাসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে।

আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। হিসাব বলছে, সেই বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে। ‘গ্রস’ হিসাবে নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে) রিজার্ভ কমছে; নেমে এসেছে উদ্বেগজনক অবস্থায়। বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হতে পারে।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা পদক্ষেপে গত সপ্তাহে রিজার্ভ খানিকটা বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছিল।

গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ৭ মার্চ আকুর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মেয়াদের ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ নামে ২৫ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারে।

আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

রোজা ও ঈদ উপলক্ষ্যে মার্চ ও এপ্রিলে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়ার কথা, সে হিসাবে আকুর আমদানি বিলও বাড়বে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মতো মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আকুর বিল যদি ১ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলারও হয়, তাহলে সেই বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন এবং ‘গ্রস’ হিসাবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে বলে হিসাব করে দেখিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরার পাশপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ায় এবং টাকা–ডলার অদলবদল (সোয়াপ) সুবিধার আওতায় ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত ডলার রিজার্ভে জমা করায় রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়েছিল। কিন্তু রেমিটেন্স প্রবাহে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে; এমনকি ঈদের আগেও রেমিটেন্স বাড়েনি। সোয়াপ কারেন্সির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যে ডলার রিজার্ভে জমা রেখেছিল, নিজেদের প্রয়োজনে সেটাও নিয়ে নিয়েছে। এসব কারণে রিজার্ভ কমছে।”

‘আরও কমবে’ বলে উল্লেখ করে আহসান মনসুর বলেন, “আগামী এক-দুই মাসে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তির পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। অন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকেও ঋণ-সহায়তা মিলবে না। কোরবানি ঈদের আগে রেমিটেন্সও বাড়বে না। এর মধ্যেই মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আকুর এপ্রিল-মে মেয়াদের আমদানি বিল শোধ করতে হবে।”

“সে হিসাবে আগামী কয়েক মাস রিজার্ভ বাড়ার কোনও আশা আমি দেখছি না। মনে হচ্ছে, নতুন বাজেটের আগ পর্যন্ত (৩০ জুন) রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচেই অবস্থান করবে,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা আহসান মনসুর।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ হিসাবে দাবি করে।

সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।

আকু হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃ আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়েছে শ্রীলঙ্কা।

আইএমএফের নতুন শর্ত অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন, মার্চ শেষে ১৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ও জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বর ও মার্চ শেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

জুন শেষে ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য পূরণ হওয়া নিয়েও সংশ্রয় প্রকাশ করেছেন আহসান মনসুর।

প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ হলো আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও আকুর বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেই রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরও দুটি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো মোট বা ‘গ্রস’ রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ।

তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে, সেটা।

আমদানি কমায় এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের আগস্টে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। কিন্তু এর পর থেকে কমতে কমতে এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

গত বছরের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের ১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। এক বছর আগে ১৭ এপ্রিল ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত