দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের একমাস পর চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মামলা আমলে নিয়ে তাদের আগামী ১৬ জুনের মধ্যে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ আওলাদ হোসেন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালতে এই মামলা করেন সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকল চাকমা।
গত ৭ জানুয়ারি ভোটে নৌকার প্রার্থী এবং দুবাবের সংসদ সদস্য নদভীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে বিজয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম এ মোতালেব। আর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগটি দেওয়া হয়েছিল তারও সাতদিন আগে ২ জানুয়ারি।
নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে সেই অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর গত ১১ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপ-সচিব (আইন) মো. আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরতি এক চিঠিতে নদভী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারও প্রায় ২৭ দিন পর মামলা দায়ের করা হলো।
দেরির কারণ জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বিকল চাকমা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের পর নথিপত্র পর্যালোচনা করে মামলা করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। অন্য কোনও কারণ নেই। আমি মামলার এজাহারেও সেটি উল্লেখ করেছি।”
গত দশ বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে নদভীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এলাকায় আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এক সময়ের জামায়াতের এই নেতা আওয়ামী লীগে এসে জামাত-শিবিরের কর্মীদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনে প্রতিষ্ঠা করেন। গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী ও রিজিয়া রেজা চৌধুরী গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে লোহাগাড়ার চুনতি মাদরাসার সিরাতুন্নবী মাহফিলে এক কোটি টাকা অনুদান দেন। একই প্রচারণায় তিনি এক সমর্থকের ছেলেকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে সেটি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
অন্য একটি সমাবেশে নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে ভোটাররা ‘গোনাহগার’ হবেন বলে মন্তব্য করেন তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী। এছাড়া লোহাগাড়ার পুটিবিলা তাঁতিপাড়ায় এক সমাবেশে ২ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন রিজিয়া।
নদভী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২ জানুয়ারি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মোতালেব। অভিযোগ গ্রহণ করে অনুসন্ধান কমিটি তাদের কাছে ব্যাখা চান। উভয়ই লিখিত ব্যাখ্যা কমিটির কাছে দাখিল করেন।
অভিযোগের সত্যতা পেয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নদভী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮’ এর ১১ (ক) বিধান অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠান।
চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত মামলা আমলে নিয়ে আসামিদের ১৬ জুনের মধ্যে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”
নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের সাজা কী
২০২৩ সালে প্রণীত নির্বাচনী বিধিমালার ১৮ ধারা অনুযায়ী, কোনও প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তি আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
আর কোনও দল যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তাহলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
নির্বাচন কমিশনের আইনে এমনটাও বলা হয়েছে যে, বিধানে যা কিছু থাকুক না কেন লিখিত অভিযোগ বা প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনচেষ্টার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রার্থিতাও বাতিল ঘোষণা করতে পারে কমিশন।
এই বিধি লঙ্ঘনের অপরাধে গত ৭ জানুয়ারি ভোটের দিনই চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে নজির গড়ে নির্বাচন কমিশন।