সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনে সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের মৃত্যুর ঘটনায় আলাদা মামলা হয়েছে।
সোমবার সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে তুরাবের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ জাবুর ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। পরে বিচারক আব্দুল মোমেন মামলা দুটি এফআইআরভুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন।
সিলেটে আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও ১৮ জুলাই শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেন নিহত হন।
এসব ঘটনায় করা মামলা দুটিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাবেক এমপি, অপসারন করা মেয়র, পুলিশের উপ-কমিশনারসহ ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে একাধিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সাংবাদিক তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, কোতোয়ালি থানার সদ্য সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপন, পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজী রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পীযূষ কান্তি দে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুদ্র সেনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী, সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সাদেক দস্তগীর কাউসার, জালালাবাদ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, পরির্দশক (তদন্ত) আবু খালেদ মো. মামুন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন, সাবেক উপ-উপাচার্য কবির হোসেন, সাবেক প্রক্টর কামরুজ্জামান চৌধুরী।
আরও রয়েছেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সহসভাপতি ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহভাপতি আফতাব হোসেন খান, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, সভাপতি নাজমুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোয়ার জাহান সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ।
বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই নগরের আখালিয়া এলাকায় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এদিন পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর বিভিন্ন স্থানে টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশ বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে। পুলিশের নির্যাতনের ভয়ে শাবি শিক্ষার্থী রুদ্র সেনসহ কয়েকজন সুরমা আবাসিক এলাকায় পেছন দিক দিয়ে একটি খাল পার হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
এসময় সাঁতার না জানায় রুদ্র সেন (২২) খালের পানিতে ডুবে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
রুদ্র শাবিপ্রবির কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি দিনাজপুরের পাহাড়পুর এলাকার সুবীর সেনের একমাত্র ছেলে।
পরদিন ১৯ জুলাই দুপুরে সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বিএনপির মিছিলে পুলিশের গুলি ছুড়লে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে গুলিবিদ্ধ হন দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ও দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাব।
পরে সেদিন রাতেই নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক তুরাব মারা যান।