জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছে আদালত।
বুধবার বিকালে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে এম এ মান্নানের জামিন শুনানিতে দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোলে এজলাস ছেড়েছিলেন বিচারক। বেলা ১১টায় জামিন শুনানির সময় এ ঘটনা ঘটে।
সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন এজলাসে উঠার পরেই দুই পক্ষের হট্টগোল শুরু হলে এক পর্যায়ে তিনি এজলাস ছাড়েন। পরে দুপুর আড়াইটায় শুনানির সময় নির্ধারণ করা হয়।
এম এ মান্নানের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মঙ্গলবার এম এ মান্নানের পক্ষে জামিন শুনানির এডমিশন করা হয়। আদালত আজকে (বুধবার) শুনানির তারিখ ধার্য করেন। এভাবে এই আদালতে এর আগে বহুবার জামিন শুনানি হয়েছে। এ নিয়ে বাদীপক্ষ সকালে হট্টগোল শুরু করলে আদালত বিকালে শুনানি করেন এবং অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন মঞ্জুর করেন।
“এসময় বাদীপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেননি। আমরা আদালতে জামিনের মুচলেকানামা দাখিল করেছি। আদালত থেকে তার মুক্তির আদেশ প্রথমে পাঠানো হবে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে। এই কারাগার থেকে সেটি পাঠানো হবে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরপর সেখান থেকে তিনি মুক্তি পাবেন।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী মল্লিক মইনউদ্দিন সোহেল সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “কোনও আইনজীবীর সাবমিশন ছাড়া এডমিশনটা অস্বাভাবিক। এতে আদালতকে নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক হয়। আমরা মনে করছি, এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিন শুনানি অস্বাভাবিকই হবে। এজন্য আমরা জামিন শুনানির আপত্তি জানিয়েছি।
“আমরা বলেছি, এই মামলাটা এই আদালতে অস্বাভাবিকভাবে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বাদীপক্ষ জানি না। এ নিয়ে আজকে শুনানি করতে চাই না। অন্যান্য মামলার মতো এই মামলার শুনানির তারিখ পরবর্তীতে দেওয়ার জন্য আদালতকে বলেছি আমরা। কিন্তু আদালত আমাদের কথা শুনতে চাননি। আসাসিপক্ষ শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য তোড়জোড় করেছেন। এ নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। পরে ‘আদালত’ এজলাস থেকে নেমে যান।”
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বর্তামানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি হিসেবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট কারাগার থেকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কেবিনে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে মেডিসিন বিভাগের অধীনে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর বুকে ব্যাথা রয়েছে। এছাড়া তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তার চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।”
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনের চারবারের সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন তাকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। গত শনিবার বিকালে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
গত ৬ অক্টোবর (রবিবার) মান্নানের দ্বিতীয় দফা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালত। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় শনিবার সকালে মান্নান অসুস্থ বোধ করলে তাকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সিলেট কারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ডিভিশনে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল।
অবশেষে বুধবার (৯ অক্টোবর) তার জামিন মঞ্জুর করলেন সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
সাবেক যুগ্ম সচিব এম এ মান্নান ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিজয়ী হয়ে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান মান্নান। পরে ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন এম এ মান্নান।