Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরির মৃত্যু

Peru_Fujimori
[publishpress_authors_box]

পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি মারা গেছেন, যিনি গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু পরে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে জেলে ছিলেন।

লাতিন আমেরিকার দেশটির রাজধানী লিমায় নিজ বাড়িতে বুধবার তার মৃত্যু হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স।

আলবার্তো ফুজিমোরির মেয়ে কেইকো ফুজিমোরি এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তার বাবার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্টের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

ফুজিমোরি ১৯৯০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পেরু শাসন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে বামপন্থি গেরিলা বিদ্রোহ দমনে কঠোর অবস্থানের জন্য তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে দেশে ফিরতে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।

ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে দুটি গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন আলবার্তো ফুজিমোরি। তাকে পেরুতে বিভাজনমূলক রাজনীতির জন্যও অভিযুক্ত করা হয়।

এক জাপানি অভিবাসী দম্পতির ছেলে ফুজিমোরি ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সময় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প পরিচিত চ্যান্সেলর ছিলেন। তিনি দ্রুত নিজেকে একজন ধূর্ত রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, যার হাতে-কলমে স্টাইল দেশে অর্থনীতির জন্য ভালো ফলাফল দেয়। তবে নিজ হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য তিনি ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন।

‘হাইপার ইনফ্লেশন’ বা অতি উচ্চ মাত্রার মূল্যস্ফীতির কারণে পেরুতে যখন লাখ লাখ তরুণ বেকার হয়ে পড়ছিল, সেই সময়ে দেশটিকে এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি থেকে বের করে এনেছিলেন ফুজিমোরি।

কয়েক ডজন রাষ্ট্র-চালিত কোম্পানিকে বেসরকারিকরণ করে এবং বাণিজ্য শুল্ক কমিয়ে পেরুর অর্থনীতিতেও গতি ফেরান তিনি। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য পেরু লাতিন আমেরিকার অন্যতম স্থিতিশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল।

তার সময়ে মাওবাদী বিপ্লবী দল শাইনিং পাথের ভয়ঙ্কর নেতা আবিমেল গুজম্যানকে বন্দি করা হয়েছিল। বামপন্থী এই আন্দোলন গত শতকের আশির দশকে পেরুর রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। গুজম্যান ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কারাগারে মারা যান।

তবে ১৯৯২ সালে পার্লামেন্ট বন্ধ করার জন্য সামরিক ট্যাঙ্ক ব্যবহার করায় পেরুর অনেক মানুষ ফুজিমোরিকে স্বৈরাচারী হিসেবে দেখেন। এ ছাড়া মুক্ত-বাজার অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিভিন্ন সংস্কার এবং কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইন বাস্তবায়নের জন্য তিনি তার পছন্দ মতো নতুন সংবিধান লিখিয়েছিলেন।

তার ১০ বছরের শাসনামলে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির কেলেঙ্কারিও তার বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছিল।

২০০০ সালে সালে তিনি তৃতীয়বার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার কিছুক্ষণ পরই তার শীর্ষ উপদেষ্টা এবং গোয়েন্দা প্রধান ভ্লাদিমিরো মন্টেসিনোসের রাজনীতিবিদদের ঘুষ দেওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে জনরোষ তৈরি হলে ফুজিমোরি জাপানে নির্বাসনে পালিয়ে যান। পরে টোকিও থেকে ফ্যাক্সের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন তিনি।

মন্টেসিনোসকে পরবর্তী সময়ে ভেনেজুয়েলায় বন্দি করা হয় এবং জেলে পাঠানো হয়। তাকে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং গণমাধ্যম মালিকদের ঘুষ দেওয়ার সময় তার নিজের রেকর্ড করা শত শত ভিডিও দেখে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।

ফুজিমোরির বিরুদ্ধেও মামলার স্তূপ জমা হতে থাকে। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, শাইনিং পাথ গেরিলাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি ডেথ স্কোয়াড বা খুনি বাহিনী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ফুজিমোরি জাপানে নিরাপদেই ছিলেন। তিনি দ্বৈত নাগরিক ছিলেন এবং জাপান তার নাগরিকদের কারও কাছে হস্তান্তর করে না।

কিন্তু ২০০৫ সালে ফুজিমোরি নিজেই ক্ষমা পাওয়ার জন্য এবং রাজনীতিতে ফেরার আশায় পেরুতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে অনেকেই হতবাক হয়েছিলেন। আর পেরুও তাকে ক্ষমা করেনি।

২০০৭ সালে দেশে ফেরার সময় তিনি চিলিতে গ্রেপ্তার হন। এরপর তাকে পেরুতে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৯ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। টানা ১৬ বছর কারাগারে কাটানোর পর গত ডিসেম্বরে মানবিক বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত