আধুনিক বিশ্ব আজকাল কর্মঘন্টা নিয়ে নানান নিরীক্ষা করছে। জোর আলাপ চলছে- একজন কর্মী পুরোনো নিয়মে সপ্তাহে ৬ দিনই কাজ করবেন? নাকি ৪দিন?
সপ্তাহে ৬ দিনের কর্মব্যস্ততায় হাঁপিয়ে উঠছেন অনেকেই। হারিয়ে ফেলছেন কাজের প্রতি মনোযোগ এবং আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন হতাশায়। তাদের মতে, সপ্তাহের মাত্র একদিন ছুটি দিয়ে সামাজিক এবং পারিবারিক কোন কাজেই ভালোভাবে যুক্ত হওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ওই একদিন কেবল ঘুমিয়ে অথবা শুয়ে বসেই কেটে যাচ্ছে। সারা সপ্তাহের ক্লান্তি পেয়ে বসে যে!
অনেকে আবার সারা সপ্তাহের জমিয়ে রাখা কাজগুলো ওই এক ছুটির দিনে করতে গিয়ে পরিবারকেই সময় দিতে পারেন না। এভাবেই ধীরে ধীরে চেপে বসে হতাশা, বিষণ্ণতা। কমে আসে কাজের প্রতি আগ্রহ।
সারা পৃথিবীতেই আজ প্রশ্ন উঠেছে। এভাবেই কি ৬ দিন অফিস আর বাসা করেই কাটিয়ে দিতে হবে গোটা জীবন?
এর উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি, বড় বড় আন্তর্জাতিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। হয়েছে বহু গবেষণা। আর তাতে দেখা গেছে সপ্তাহে টানা ৬ দিন কাজের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা, কাজে ভারসাম্যহীনতা এবং অবধারিতভাবে পারিবারিক অশান্তি নেমে আসে।
আর ৬ দিন কাজ করতে গিয়ে চাকুজীবিদের ব্যক্তিগত অথবা পাবলিক যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়। ফলে প্রচুর কার্বন নিঃসরণ জলবায়ু সংকটকে তরান্বিত করে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের উপর যে ক্ষতিগুলো হয় তার প্রভাবে কার্ডিওভাসকুলার, ক্যান্সার এবং ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হয়।
কিন্তু সপ্তাহে ৪ দিনের কর্ম ঘন্টা কিভাবে ভারসাম্য তৈরি করে?
গবেষণায় দেখা গেছে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পার্টটাইম কর্মী হল নারী। ফলস্বরূপ, এই নারীদের বেতনও বেশ কম। তা সত্ত্বেও, বিভিন্ন জরিপে প্রমাণিত হয়েছে যে খণ্ডকালীন কর্মরত এইসব নারীরা সপ্তাহে পাঁচ কিংবা ছয় দিন কাজ করা সহকর্মীদের সমপরিমাণ কাজ করতে পারে। আবার অন্যদিকে খন্ডকালীন কাজ করায় তারা পরিবারেও সময় দিতে পারে।
এইসব গবেষণা থেকে ‘প্রথম বিশ্বের’ অনেক দেশই আজ সপ্তাহে ৪ দিনের এক পরীক্ষামূলক কর্মসপ্তাহে প্রবেশ করতে চাইছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছেন তাদের পুরুষ কর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করা পুরুষরা ঘরের কাজে এবং সন্তান পালনে সময় দিতে পারছেন। পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, বেড়াতে যাওয়া, থিয়েটারে যাওয়া ইত্যাদি নানান বিনোদনমূলক কাজে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অংশ নিতে পারছেন।
মজার বিষয় হলো, নারীরা যখন সন্তান পালনের দায়িত্ব নিতে স্বল্প বেতনে খণ্ডকালীন কাজ নেন, তখন তার পুরুষ সঙ্গীদের উচ্চ বেতন ও উচ্চ চাপের কাজে বাধ্য হয়েই যুক্ত হতে হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই যদি সপ্তাহে ৪ দিন কাজের সুযোগ তৈরি হয় তবে কাজের ব্যাপ্তি এবং বেতনে ভারসাম্য তৈরি হয়।