গত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইউক্রেনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ফ্রান্স। এরপর প্রকাশ্যেই কোচ দিদিয়ের দেশমের সমালোচনা করেন তারকা ফরোয়ার্ড আন্তোয়ান গ্রিয়েজমান, ‘‘আরও আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আমাদের খেলা উচিত ছিল। আক্রমণভাগের ফুটবলারদেরও দলে দরকার ছিল। এই সিস্টেমে কি ভাবে খেলা উচিত, তা আমাদের শিখতে হবে। আমরা জিততে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমরা সে ভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। আমাদের আরও উন্নতির প্রয়োজন।’’
ফ্রান্স ৪-২-৩-১ ছকে খেলতেই অভ্যস্ত। ইউক্রেনের বিপক্ষে দেশম খেলান ৪-৪-২ ছকে। তাতেই মানিয়ে নিতে না পেরে ম্যাচটা ড্র করেছিল ফ্রান্স। কোচরা নানা রকম পরীক্ষা করবেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এবারের ইউরোয় দেশম খেলাচ্ছেন আবার ৪-৩-৩ ছকে। তাতেই কী অচেনা হয়ে পড়েছে ফ্রান্স। এমবাপ্পে, দেম্বেলে, গ্রিয়েজমান, জিরুর মতো তারকা থাকতেও ইউরো জুড়ে গোল খরায় ফ্রান্স।
গ্রুপ পর্বে তাদের জয় একটিই, ড্র দুই ম্যাচে। তিন ম্যাচে তাদের গোল মাত্র ২টি! সময়ের অন্যতম সেরা তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে ১ গোল করলেও সেটা পেনাল্টি থেকে। পুরো ইউরোয় তাদের গোল ৩টি, এর দুটি আত্মঘাতী, একটি পেনাল্টি থেকে। মানে এখনও ওপেন প্লে থেকে গোল নেই!
আসলে শুধু এবারের ইউরো নয়, দেশম ২০১২ সালে ফ্রান্সের কোচ হওয়ার পর থেকেই গোল করার চেয়ে রক্ষণে জোড় দিয়েছেন বেশি। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সেই বিখ্যাত উক্তিটা মেনে চলেন তিনি, ‘‘অ্যাটাক হয়তো ম্যাচ জেতাবে কিন্তু রক্ষণ জেতাবে শিরোপা।’’
এজন্যই ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশম বলেছিলেন, ‘‘আমি অন্যভাবেও বিশ্বকাপটা জিততে পারতাম। তাহলে হয়তো সমালোচকরা চুপ থাকত। কিন্তু রাশিয়ায় বিশ্বকাপ জয়ই বলছে আমি সঠিক ছিলাম।’’
২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে মাত্র ৩ গোলই করেছিল ফ্রান্স। তবে রক্ষণ সামলে গোল হজম করেছিল কেবল ১টি। অথচ সেমিফাইনাল খেলা বেলজিয়াম গ্রুপ পর্বে করেছিল ৯ গোল আর ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার গোল ছিল ৭টি। সবমিলিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপে ১৪ আর ২০২২ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের গোল ছিল ১৬টি। সেটাও দেশমের ট্যাকটিক্সের চেয়ে এমবাপ্পে, জিরুদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কারণে।
২০১৮ বিশ্বকাপে তারা গোল হজম করেছিল ৬টি। এর আগে জিনেদিন জিদানরা ফ্রান্সকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতান ১৯৯৮ সালে। সেবার মাত্র ২ গোল হজম করা ফ্রান্স করেছিল ১৫ গোল। রক্ষণ ঠিক রেখে আক্রমণের অনন্য প্রদর্শনীই করেছিল সেই দল, যার অন্যতম সদস্য ছিলেন দেশমও।
দেশম কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউরো জিততে পারেনি ফ্রান্স। ২০১৬ সালে ফাইনাল আর ২০২০ ইউরোয় বিদায় নেয় শেষ ষোলো থেকে। গত ইউরোয় ৪ ম্যাচে মাত্র ৭ গোলই করেছিল ফ্রান্স।
এই পরিসংখ্যানই বলছে মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদানদের ফ্রান্সের সেই সৌরভ নেই দেশমের দলে। আজ কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের বিপক্ষে কী নিজেদের মেলে ধরতে পারবে তারা?
ম্যাচটাকে বলা হচ্ছে গুরু-শিষ্যের লড়াইও। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে আদর্শ করে বেড়ে ওঠা কিলিয়ান এমবাপ্পে মুখোমুখি নিজের আদর্শের। মাঠে নামার আগে রোনালদোকে প্রশংসাতেই ভাসিয়েছেন এমবাপ্পে,‘‘ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো একজনই। তার মতো ফুটবলার আর আসবে না। আমি রোনালদোর ভক্ত, সে যা করেছে ভাবা যায় না। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ফুটবলে উৎসাহিত করেছে। আশা করছি আমাদের বিপক্ষে হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবে না সে (হাসতে হাসতে)।’’
দেশম যে ট্যাকটিক্সে দল খেলাচ্ছেন, তাতে আজ হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়া কঠিন ফ্রান্সেরই।