Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫

করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি : আজাদ-সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা 

আবুল কালাম আজাদ ও সাবরিনা শারমিন হুসেন।
আবুল কালাম আজাদ ও সাবরিনা শারমিন হুসেন।
[publishpress_authors_box]

করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির সুযোগ দেওয়ার অভিযোগে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আসামিদের মধ্যে আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদও।

বুধবার দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। বিষয়টি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- জেকেজি হেলথ কেয়ারের স্বত্ত্বাধিকারী জেবুন্নেসা রিমা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুল চৌধুরী এবং কর্মকর্তা আ স ম সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির ওরফে হিমু ও তানজিনা পাটোয়ারী। 

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর পর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ওই বছরের ২৩ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

সেই সময় নমুনা পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়েছে- এমন অভিযোগে কামাল হোসেন নামে একজন তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, বিশ্বাসভঙ্গ, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়।

মামলায় ওই বছরের ১২ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরেজাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর তার অবৈধ সম্পদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির বিষয়ও সামনে আসে।

ওই মামলায় ২০২২ সালের ১৯ জুলাই সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলসহ ছয়জনকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন সাবরিনা।

বুধবারের মামলায় বলা হয়েছে, আসামি ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেন জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসৎ উদ্দেশ্য এবং কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামক একটি লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পরিচয় ব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অন্যদের যোগসাজশে অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেড লাইসেন্সবিহীন তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন। 

এজাহারে বলা হয়েছে, বিনামূল্যে বুথ থেকে করোনার পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ না করে ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফুলের নির্দেশে তার অফিসের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে টেস্ট ফি হিসেবে প্রতিটি টেস্টের জন্য ৫-৮ হাজার টাকা নেয়। তবে তাদের নমুনা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া ও জাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, করোনাকালে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি ও লকডাউন চলাকালে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত মাত্র ৩ মাসে জেকেজি সংশ্লিষ্ট ওভাল গ্রুপ এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ভেলবিল সিকিউরিটি সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭ টাকা জমা হয়, যা করোনা টেস্টের টাকা মর্মে প্রতীয়মান হয়।

মামলায় বলা হয়েছে, ডা. সাবরিনা প্রতারণা ও জালিয়াতির উদ্দেশ্যে নিজের জন্ম তারিখ বদলে দুটো এনআইডি করে তা দিয়ে দুটো টিআইএন নম্বর খোলেন। তিনি প্রকৃত জন্ম সাল ১৯৭৮ কে ১৯৮৩ বানিয়ে তার কর্মস্থলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে চাকরির মেয়াদ ৫ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা অবৈধভাবে গ্রহণের অপচেষ্টা করেছেন।

স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির বিষয়ে এজাহারে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে কোভিডকালীন দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাজের অভিজ্ঞতাহীন, নিবন্ধনবিহীন, ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফুল চৌধুরীর ওভাল গ্রুপের নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথ কেয়ারকে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে মহাপরিচালক হিসেবে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

মামরায় বলা হয়েছে, আসামি আরিফ তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা শারমিন হুসেনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের কাজ নেন। টেস্ট ফি হিসেবে টাকা নেওয়ার বিধান না থাকলেও অর্থের বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া ও জাল সনদ প্রস্তুত করেছেন। এবং তা সেবা গ্রহীতাদের সরবরাহ করেছেন। এর ফলে মহামারির সময়ে জীবন বিপন্নকারী রোগের সংক্রমণ বেড়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত