স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে জুলাই অভ্যুত্থানকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়ে ক্ষমা চাইতে হলো ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানকে।
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপনে বুধবার ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই ঘটনা ঘটে।
সকাল ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হলে প্রথমে অতিথিরা আসন গ্রহণ করেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ।
সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নেওয়া হয়। পরে অতিথিদের বক্তব্যের পর্ব চলে।
সিভিল সার্জন জিল্লুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “১৯৭১ সালের আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তার এখনও অপূর্ণতা রয়ে গেছে। যার কারণে ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলন।
“বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সংবর্ধনা দিয়েছি, জুলাই আন্দোলনকারীদেরও সংবর্ধনা দেব। যে দুই কারণে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছিল, একই কারণে ২০২৪ এ যুদ্ধ হয়েছে। বার বার যুদ্ধ করেছি।”
এসময় অনুষ্ঠানে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। তারা সমস্বরে বলতে থাকেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের সাথে ২০২৪ এর আন্দোলনের তুলনা হয় না।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য প্রত্যাহার করে সিভিল সার্জনকে ডায়াস থেকে নেমে যেতে বলেন। তখন জিল্লুর ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেমে যান। এরপর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এই ঘটনার জন্য সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে শান্ত থাকার আহ্বান জানালে অনুষ্ঠান পুনরায় শুরু হয়।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনকে অভ্যুত্থানকারীরা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলার পর থেকে ১৯৭১ ও ২০২৪ এর তুলনা নিয়ে বিতর্ক চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশের দাবি, এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার প্রয়াস চলছে।
জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের কোনও বিনিময় হয় না। মুক্তিযোদ্ধারা যারা বেঁচে আছেন, তারা আমাদের সম্পদ। তারা আমাদের মাথার তাজ।
“প্রত্যেক বছরই আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এক সময় হয়ত একজন মুক্তিযোদ্ধাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। অনেক খুঁজে হয়ত আমরা একজনকে পাবো। তখন বুঝতে পারবো, মুক্তিযোদ্ধাদের কদর।”
বীর মুক্তিযোদ্ধারা সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের বিষয়টি যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন করুন।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বানও জানান তারা।
সহকারী কমিশনার শোয়েব শাত ইল ইভান ও নুসরাত নওশীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ফুয়ারা খাতুন, বীর মুক্তিযোদ্ধার এ বি এম মাহবুবুর রহমান জাহাঙ্গীরের মেয়ে সাবিরা মাহবুব, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, শফিকুর রহমান প্রমুখ।