Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

‘ফ্রেন্ডস’ তারকা ম্যাথু পেরির মৃত্যু: হলিউডের কেটামিন আসক্তি

matthew-perry-310824
[publishpress_authors_box]

নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় সিচুয়েশেন কমেডি বা সিটকম ‘ফ্রেন্ডস’  টেলিভিশন সিরিজের  ছয় চরিত্রের একটি ‘চ্যান্ডলার বিং’; এই চরিত্রে দর্শকের মন জয় করেছিলেন অভিনেতা ম্যাথু পেরি। 

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ৫৪ বছর বয়সে মারা যান এই অভিনেতা।  মৃত্যুর দেড় মাস পর তার ময়না তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘কেটামিনের মাত্রাতিরিক্ত’ প্রভাবে সুইমিং পুলে অচেতন হয়ে ডুবে মারা যান তিনি।

বিষন্নতা, অস্থিরতা, ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চিকিৎসায় কেটামিনের মতো শক্তিশালী চেতনানাশক দেওয়া হয়ে থাকে।

অনেকদিন ধরেই ব্যথানাশক আর অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন ম্যাথু পেরি। মাদকাসক্তির কারণে পুনর্বাসন কেন্দ্রেও যেতে হয়েছিল তাকে।

ময়না তদন্তে ম্যাথু পেরির পাকস্থলীতে কেটামিন অল্প পরিমাণে পাওয়া গিয়েছিল। তবে রক্তে এই মাদক উচ্চ মাত্রায় পাওয়া যায়।

কীভাবে অভিনেতা ম্যাথু পেরির শরীরে ‘অনুমতি ছাড়া বিক্রি নিষিদ্ধ’ এই ওষুধ প্রবেশ করেছিল?  প্রশ্নের উত্তর মেলাতে এরপর শুরু হয় তদন্ত।

যদিও আমেরিকান বোর্ড অব কেটামিন ফিজিশিয়ানের সভাপতি ডেভিড মাহজৌবি বিবিসিকে বলেন, “এই ওষুধ পাওয়া খুবই সহজ; অবৈধ ভাবে অথবা প্রেসক্রিপশন দিয়ে।

“আমার কাছে অনেক তারকারাই এসে প্রেসক্রিপশন নিয়ে যান। এই ওষুধ পাওয়া একেবারেই কঠিন কিছু না।”

তদন্তের এক পর্যায়ে পাঁচ জনকে ম্যাথু পেরির মৃত্যুর পেছনে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করে পুলিশ।

অগাস্টের মাঝামাঝিতে পুলিশের বরাতে বিবিসি জানায়, এই ঘটনায় মাদক কারবারিদের বড় একটি চক্র জড়িত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি মার্টিন এসট্রাডা বলেন, “পেরির মাদকাসক্তির সুযোগ নিয়েছিল অপরাধীরা।

“পেরির সঙ্গে কী ঘটতে পারে এ নিয়ে তারা পুরোপুরি অবগত ছিল। এরপরও তারা থামেনি।”

জেনারেল অ্যানেস্থেশিয়ার সময় যে পরিমাণ চেতনানাশক শরীরে দেওয়া হয়, পেরির শরীরের ততটাই অতিরিক্ত কেটামিন ছিল বলে জানাচ্ছে মরদেহ পরীক্ষাকারী চিকিৎসকরা।   

অভিনেতা পেরির নিয়োগ দেওয়া সহকারীও এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছে। এছাড়া একজন চিকিৎসক এবং জাসভিন সাংঘা নামে এক মাদক ব্যবসায়ী, যাকে বলা হচ্ছে হলিউডের ‘কেটামিন কুইন’, পুলিশি হেফাজতে আছেন।

পেরির সহকারী কেনেথ ইওয়ামাসা দুজন চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে ৫০ হাজার ডলারের কেটামিন সরবরাহ করে দিয়েছিলেন এই অভিনেতাকে। পেরির মৃত্যুর সপ্তাহখানেক আগে ঘটে এই ঘটনা।

পেশাগত অনুমোদন সীমার বাইরেও পেরিকে কেটামিন দিতেন চিকিৎসক সালভাদোর প্লাসেনসিয়া। তিনি ইওয়ামাসাকে ইনজেকশনের মাধ্যমে এই মাদক দেওয়া শিখিয়েছিলেন।

মৃত্যুর চারদিন আগেও ইওয়ামাসা অন্তত ২৭ বার কেটামিন দিয়েছিল পেরিকে।

এরিক ফ্লেমিং এবং চিকিৎসক মার্ক চাভেজের সহযোগিতায় ‘কেটামিন কুইন’ জাসভিন সাংঘা কেটামিন সরবরাহ করতেন প্লাসেনসিয়ার কাছে।

আদালতে চাভেজ, ফ্লেমিং এবং ইওয়ামাসা তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। তবে জাসভিন এবং প্লাসেনসিয়া নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেন।

তবে এই ঘটনার পর চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, তারকা রোগীদের ‘আবদার’ সামলানো খুব সহজ কাজ নয়।

ক্যালিফোর্নিয়াতে দুটো কেটামিন ক্লিনিক পরিচালনা করছেন চিকিৎসক মাহজৌবি।  

এক তারকা তার রোগী ছিলেন জানিয়ে মোহজৌবি বিবিসিকে বলেন, “ওই রোগী বারবার  প্রেসক্রিপশন নতুন করে লিখে দিতে অনুরোধ করতো।  

“আমি তাকে বলেছিলাম, চিকিৎসা বিষয়ক কোনো কথা থাকলে আমাকে ইমেইল করে জানান। এরপর আমি তাকে ব্লক করেও রাখি।”

এই চিকিৎসক বলেন, আজকাল তারকারা পার্টিতে গিয়েও কেটামিন নিচ্ছেন; তারকাদের অনেকে কোকেইনের চেয়ে নিরাপদ ভেবে কেটামিনে ঝুঁকে পড়ছেন।  

লস অ্যাঞ্চেলস শহরে কয়েকটি ব্যথা উপশম কেন্দ্র পরিচালনাকারী একজন চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, “চিকিৎসার নামে কেটামিন আসক্তি যেন নতুন করে বুনো পশ্চিম চেনাচ্ছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত