Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫
Beta
রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

রবিবার থেকে আমানতকারীরা দুর্বল ব্যাংকেও টাকা পাবেন : গভর্নর

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
[publishpress_authors_box]

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দিতে টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সরকার। ইতোমধ্যে টাকা ছাপিয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দুর্বল ছয় ব্যাংককে ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আগামী রবিবার থেকে যেসব ব্যাংকে গিয়ে আমানতকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না, সেসব ব্যাংকেও টাকা পাওয়া যাবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।

সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আমানতকারীদের স্বার্থ পুরোপুরিভারে রক্ষা করবে। কোনও আমানতকারী ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত পাবে না এমনটা হবে না। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দুর্বল ছয় ব্যাংককে এরই মধ্যে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও টাকা ধার দেওয়া হবে।

আমানতকারীদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, “আপনারা আগামী রবিবার ব্যাংকে যাবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে পারবেন। তবে একসঙ্গে সবাই যাবেন না। বা একসঙ্গে সব টাকা তুলতে চেষ্টা করবেন না।”  

সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির মধ্যে থেকেই টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে ধার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমরা যে পরিমাণ টাকা ব্যাংকগুলোকে ধার দিচ্ছি, সেই টাকাই গ্রাহকরা দুর্বল ব্যাংক থেকে তুলে সবল ব্যাংকে রাখবেন। সেই টাকা আমরা বন্ড ছেড়ে সবল ব্যাংক থেকে তুলে নেব। ফলে বাজারে নতুন কোনও মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে না।”  

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ১৩ আগস্ট গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আহসান এইচ মনসুর। এরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন থেকে কোনও ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে ধার দেবে না।

তবে এরপর থেকে কিছু ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে আমানতের টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন গ্রাহকরা। তবে টাকার স্বল্পতা থাকায় অনেক ব্যাংক থেকে খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাদের।

তবে এখন টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার গভর্নর বলেন, “আমি বলেছিলাম টাকা ছাপাব না। কিন্তু সেটা থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছি। বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সেই টাকা তুলে নিয়ে আসব। কিন্তু মনিটরিং পলিসি আগের মতো টাইট থাকছে। এখানে নেট মানি ক্রিয়েশন হচ্ছে না।

“একদিকে সহায়তা করা হচ্ছে, অন্যদিকে বন্ডের মাধ্যমে তুলে নিচ্ছি। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী এই সহায়তা দেওয়া অব্যাহত থাকবে। আমাকে ডিপোজিটর ও মূল্যস্ফীতি দুটিই রক্ষা করতে হবে।”  

ধার পাওয়া ব‌্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ‌্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

আগের সরকারও টাকা ছাপিয়ে সহায়তা করেছিল, আবার দেওয়া হচ্ছে, তাহলে তফাৎ কী— এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, “এখন টাকা চুরি বন্ধ হয়েছে। প্রতিটা ব্যাংক তদারকি করা হচ্ছে। ব্যাংক থেকে এখন আর টাকা চুরি হচ্ছে না। আগে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়ার পরও টাকা পাচার হ‌য়ে চলে যেত। কিন্তু এখন জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রতিটা ব‌্যাংকে ম‌নিট‌রিং করা হ‌চ্ছে। বোর্ড প‌রিবর্তন করা হয়েছে।”

এস আলমের মামলা করার হুমকির বিষয়ে গভর্নর বলেন, “উনি কী করবেন, ওটা ওনার বিষয়। আমরা আইন অনুযায়ী তাদের অ্যাসেট বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেব। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়া নি‌য়ে কথা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটা করা হচ্ছে।”

ব্যাংকারদের আন্দোলন ও প্রভাবশালীদের চাপ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “মব জাস্টিস মে‌নে নেব না। আমাকে কেউ চাপ দিলে চাকরি ছেড়ে চলে যাব। কিন্তু কোনও অনিয়ম বরদাশত করব না।”

বিগত দিনে যারা অনিয়মে যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “সামনের দিকে তাকাতে হবে। আমাদের পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নিদিষ্ট অভিযোগ না পেলে আমি নিজ থেকে কোনও ব্যবস্থা নেব না। এখানে দলাদলি আছে। লাল, নীল দলের প্রতিনিধিত্ব না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হয়ে কাজ করেন।”

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, “এতদিন প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র প্রকাশ হতো না। এখন সঠিক নিয়মে হিসাব হবে। এতে করে যদি খেলাপি ঋণ ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় তাহলেও কিছু করার নেই।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত