জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচ হাজার কোটি) ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি-৭।
বৃহস্পতিবার ইতালিতে শুরু হওয়া এই জোটের তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনেই এ বিষয়ে সম্মত হন জোট নেতারা।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রসহ জি-সেভেনের সদস্য রাষ্ট্রগুলো কিয়েভকে পাঁচ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত ঋণ দেবে। পশ্চিমা দেশগুলোতে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ থেকে দেওয়া হবে এই অর্থ।
চলতি বছরের শেষদিকে ইউক্রেন ঋণের এই অর্থ পাবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টা এবং অর্থনীতিকে সহায়তার জন্য এই ঋণকে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রথম দিনে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ১০ বছরের দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিও সই হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট একে ‘ঐতিহাসিক চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
চুক্তিতে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এতে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা পাঠিয়ে সহায়তার দেওয়া সংক্রান্ত কোনও প্রতিশ্রুতি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, এটি রাশিয়ার কাছে আরেকটি বার্তা পাঠাবে যে আমরা ইউক্রেনের পাশ থেকে সরে যাচ্ছি না।
বাইডেন বলেন, “পুতিন আমাদের বিভক্ত করতে পারবেন না এবং আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে থাকব, যতক্ষণ না তারা এই যুদ্ধে জয়ী হয়।”
এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘ব্রাসেলসের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ হবে। ব্রাসেলসে জি-৭ এর সদর দপ্তর অবস্থিত।
বৃহস্পতিবার জি-৭ সম্মেলনের প্রথম দিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই অধিবেশনেই ইউক্রেনকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ওই অধিবেশনে জোটের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, জাপান ও যুক্তরাজ্যের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জোটের অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সমমূল্যের তহবিল ও সম্পদ জব্দ করেছে।
এসব তহবিল ও সম্পদ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের মুনাফা ও সুদ আসছে। সেই মুনাফার ওপর ভিত্তি করেই ইউক্রেনকে বহু বছর মেয়াদি ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে জি-৭। ওই মুনাফা থেকেই ইউক্রেনকে দেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করা হবে।
ইউক্রেন অবশ্য রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদের পুরোটাই তাদের দিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক ইউক্রেনের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।
কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জি-৭ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জব্দকৃত সম্পদ ইউক্রেনকে দিতে পারে না। ফলে সেই সম্পদ থেকে আসা মুনাফা ও সুদকে সৃজনশীল উপায়ে কাজে লাগাতে চাইছে তারা।
জি-৭ জোটের সদস্য দেশগুলো যুদ্ধের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।