পুঁজিবাজারে মন্দা কাটাতে কোনও দিক-নির্দেশনা ছিল না নতুন বাজেটে; উল্টো মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ছিল করের প্রস্তাব। এই অবস্থায় বাজেট পেশের পর লেনদেনের প্রথম দিনই বড় দরপতন হয়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। দুই বাজারেই মূল্যসূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন।
গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
সেই বাজেটের নানা লক্ষ্য অর্জন নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সংশয়ের মধ্যে রবিবার প্রথম লেনদেনে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই ছিল পতনের ধারায়।
প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে এসেছে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমেছে।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের পুঁজিবাজারে মন্দা চলছে। ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীই হতাশ। অনেক বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বাজেটের আগে ডিএসইসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দাবি ছিল, ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে নতুন করে যেন করারোপ করা না হয়। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফায় কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ার লেনদেন করে কোনও বিনিয়োগকারী এক বছরে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা করলে তার ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে, বাকি ৫ লাখ টাকা মুনাফা ওই বিনিয়োগকারীর মোট আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।
তাতে ওই বিনিয়োগকারীর নির্দিষ্ট একটি অর্থবছরে তার মোট আয়ের ওপর যে হারে কর প্রযোজ্য হবে, সেই হারে কর দিতে হবে।
তবে কোনও বিনিয়োগকারী যদি কোনও শেয়ার একটানা ৫ বছর ধরে রেখে ৫০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করে, সে ক্ষেত্রে ওই মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ হবে।
রবিবারের লেনদেনে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ১৫ শতাংশ কর বসানোর প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী।
সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এমনিতেই বাজারে মন্দা চলছে। ভালো-মন্দ সব শেয়ারের দামই কমতে কমতে একেবারে নিচে নেমে এসেছে। বাজেটের আগে ‘গেইন ট্যাক্স’ আতঙ্ক নিয়ে কয়েক দিন টানা পড়েছে বাজার। সত্যি সত্যি সেই ট্যাক্স আরোপের ফলে বাজেট পেশের পরও দরপতন অব্যাহত রয়েছে।”
“জানি না, বাজারের কী হবে?” সামনের পরিস্থিতি নিয়েও আশাবাদী হতে পারছেন না তিনি।
বাজার পরিস্থিতি
বাজেট পেশের আগে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়তে পড়তে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছিল। বাজেট প্রস্তাবের দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২৩৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট।
দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির পর রবিবার সেই সূচক ৬৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৫ শতাংশ কমে ৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট হয়েছে। এক বছর আগে ৫ জুন ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ৩৫৬ দশমিক ৩০ পয়েন্ট।
হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স কমেছে ১ হাজার ১৮৪ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৬ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা দশমিক ৭১ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ৮৪০ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে নেমেছে। এক বছর আগে ৫ জুন সিএএসপিআই ছিল ১৮ হাজার ৭৭৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট।
এহিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সিএএসপিআই কমেছে ৩ হাজার ৯৩৬ দশমিক ৫১ পয়েন্ট।
রবিবার ডিএসইতে ৩৫৭ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫৪২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৩৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ৩৪০টি কোম্পানির দর কমেছে। ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
রবিবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১০ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। বৃহস্পতিবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
রবিবার ২১৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৪টির। কমেছে ১৫১টির। অপরিবর্তিত ছিল ৩২টির দর।