জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভোটো না দেওয়ায় প্রস্তাবটি পাস করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলিসহ সব বিদেশি জিম্মিরও অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়, আর যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদান থেকে বিরত ছিল কারণ তারা প্রস্তাবের সবকিছুর সঙ্গে একমত নয় এবং এতে হামাসের প্রতি নিন্দা জানানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো প্রয়োগ না করলে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করার হুমকি দেন।
গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বারবার ভেটোর কারণে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস করা যাচ্ছিল না। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনটি প্রস্তাব আটকে দেয়।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোদানে বিরত থাকার এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের ইঙ্গিত দেয়।
এর আগে যতগুলো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র সেগুলো আটকে দিয়েছিল এই বলে যে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য আলোচনা চলমান অবস্থায় এই ধরনের পদক্ষেপ ভুল হবে।
তবে সম্প্রতি গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হয়।
সেই বিরোধের জেরে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র নিজেই একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে। কিন্তু সেই প্রস্তাব ইসরায়েলের পক্ষে যায় অভিযোগ করে তাতে ভেটো দেয় রাশিয়া ও চীন।
পরে নতুন এই প্রস্তাব আনা হয়। রাশিয়া চেয়েছিল প্রস্তাবটিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হোক। কিন্তু রাশিয়ার সেই দাবি গৃহীত হয়নি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় গাজার শাসক দল হামাসের যোদ্ধারা। সেদিনই গাজায় পাল্টা বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর ২৮ অক্টোবর গাজায় স্থলবাহিনীও পাঠায় ইসরায়েল।
গত সাড়ে পাঁচ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হয়েছিল ১২০০ জন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ান