পরিবেশবান্ধব বা সবুজ কারখানার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশের আরও একটি পোশাক কারখানা। এ নিয়ে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের লিড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১৪টিতে।
সবশেষ লিড সনদ পাওয়া কারখানার নাম এপিএস নিট কম্পোজিট লিমিটেড। এটির অবস্থার গাজীপুরের পুবাইলে। কারখানাটি পেয়েছে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড কারখানার স্বীকৃতি।
রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে বিজিএমইএ।
বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএসজিবিসি যে সনদ দেয়, তার নাম ‘লিড’। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।
এ সনদ পেতে প্রতিটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে মান রক্ষা করতে হয়।
নিয়ম অনুযায়ী, মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে কোনো কারখানা ৮০’র বেশি পেলে লিড প্লাটিনাম, ৬০-৭৯ পেলে লিড গোল্ড, ৫০-৫৯ নম্বর পেলে লিড সিলভার এবং ৪০-৪৯ নম্বর পেলে লিড সার্টিফায়েড সনদ দেওয়া হয়।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৫৪টি এবং শীর্ষ ২০টি লিড সনদপ্রাপ্ত গ্রিন কারখানার ১৮টিই বাংলাদেশের।
বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন শুরু হয় ২০১২ সালে। প্রথম কারখানাটি ছিল ঈশ্বরদী ইপিজেডের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও।
এরপর সময়ের সঙ্গে দেশে একের পর পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে।
বিশেষ করে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যখন বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশ ভাবমূর্তির সংকটে পড়ে, তখন পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।
সাধারণত অন্যান্য স্থাপনার চেয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ৫-২০ শতাংশ খরচ বেশি হয়। তবে বাড়তি খরচ করলেও দীর্ঘমেয়াদি সুফল পাওয়া যায়। ইউএসজিবিসি লিড সনদ পেতে স্থাপনা নির্মাণে নয়টি শর্ত পরিপালন করতে হয়।
তার মধ্যে আছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানি সাশ্রয়ী কল ও ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করতে হয়।
এ ছাড়া স্থাপনায় পর্যাপ্ত খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। সব মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব স্থাপনায় ২৪-৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ, ৩৩-৩৯ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ এবং ৪০ শতাংশ পানি ব্যবহার কমানো সম্ভব।
অর্থাৎ দেশে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সংখ্যা যত বেশি হবে, ততই তা পরিবেশের ওপর চাপ কমাবে।