Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৮ শতাংশে নামতে পারে : আইএমএফ

IMF
[publishpress_authors_box]

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে দেশের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে।

তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

মঙ্গলবার রাতে আইএমএফের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস বা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।  বৈঠকটি শুরু হয় গত সোমবার।

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে আইএমএফ পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বন্যার কারণে প্রবৃদ্ধি কমবে বলে সে সময় বলেছিল সংস্থাটি।

গত ৯ এপ্রিল প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের (এডিও) প্রতিবেদনে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এডিবি বলেছে, বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

এর আগে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে বলে প্রতিবেদনে বলেছে এডিবি।

সেক্ষেত্রে আইএমএফ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির চেয়েও কমিয়ে দিল।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার।

তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ২২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের তিন প্রান্তিক (নয় মাস, জুলাই-সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-মার্চ) শেষ হয়েছে।

গত ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে বলা হয়, এই প্রান্তিকে দেশে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।

প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

মূল্যস্ফীতি হবে ১০ শতাংশ

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রতিবেদনে আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে।

গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে বাংলাদেশ। বিবিএসের হিসাবে, গত মার্চে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

মার্চে শেষে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি (২০২৪ সালের এপ্রিল-২০২৫ সালের মার্চ) দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

এক যুগেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। ওই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ হয়।

শুল্কযুদ্ধে কমবে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে বড় ধাক্কা খেয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। এতে চলতি বছরে বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমবে। মূল্যস্ফীতি কমতে সময় লাগবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকের প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছে, চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ পয়েন্ট কম।

আইএমএফের ভাষ্য, শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বড় সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ১ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছর ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ।

আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ে গোউরিনচাস ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি।

“৮০ বছর ধরে চলে আসা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন রূপ নিচ্ছে। এটি যদি চলতে থাকে, তাহলে বাড়তে থাকা বাণিজ্য উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর করে দেবে।”

গত ২ এপ্রিল বিশ্বের ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে দেশগুলোকে এই শুল্ক দিতে হবে বলে জানানো হয়।

অবশ্য এ ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি সহজ করা এবং বাণিজ্য বাধা দূর করার অঙ্গীকার করে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়।

তখন যুক্তরাষ্ট্র ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রেখে বাকিটা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ শুল্ক।

তবে চীনের ওপর শুল্ক ট্রাম্প কমাননি, বরং বাড়িয়েছেন ১৪৫ শতাংশ।

পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে।

পাল্টাপাল্টি এই শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি মন্দা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে অলিভিয়ে গোউরিনচাস রয়টার্সকে বলেন, পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ বাড়তে থাকলে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এতে আর্থিক বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে।

আইএমফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে তারা যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তার চেয়ে আরও ধীরগতিতে কমতে পারে মূল্যস্ফীতি। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি চলতি বছরে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। আর ২০২৬ সালে তা দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৬ শতাংশে। যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল এই যৌথ সভায় অংশ নিচ্ছে।

সভা চলাকালে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত