যুক্তরাষ্ট্রর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ। তিনি দাবি করেছেন, কোনও অন্যায় কাজে ভাইদের সহযোগিতা করেননি তিনি।
দায়িত্ব পালনকালে কোনও অন্যায় কাজের প্রমাণ কেউ দিতে পারলে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে আল জাজিরার ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’র যোগসাজশ রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
জেনারেল আজিজ সেনাপ্রধান থাকাকােল ২০২১ সালে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরায় প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়েছিল। যেখানে তার বিরুদ্ধে ভাইদের অন্যায় কাজে সহযোগিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়।
তার তিন বছর পর সোমবার যুক্তরাষ্ট্র আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে আজিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়, আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসাবে সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় দুর্নীতি করেন। তিনি তার ভাইদের বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহায়তা করেন। সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কাজ দুর্নীতির মাধ্যমে পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভাইদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি।
জেনারেল আজিজ ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালকের পদে।
ঢাকায় অবস্থানরত আজিজ আহমেদ ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সময় টেলিভিশনকে বলেন, সরকারি পদ ব্যবহার করে তিনি কোনও অন্যায় করেননি, কোনও অন্যায় কাজে ভাইদেরও সহযোগিতা করেননি।
আজিজ সেনাপ্রধান হওয়ার আগের মাসে তার ভাই তোফায়েল আহমেদ জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। হত্যামামলায় তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, তবে আপিল বিভাগের রায়ে তার শাস্তি হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাবাস।
ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যামামলায় সাজা খাটছিলেন জোসেফ। আজিজের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপুকে গত শতকের ৯০ এর দশকে এই ফ্রিডম পার্টির নেতা-কর্মীরা খুন করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জোসেফ পুলিশের তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। তার অন্য দুই ভাই হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদও হত্যামামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে তারা বিদেশে চলে যান। ২০১৯ সালে তাদের সাজাও মওকুফ হয়।
জোসেফ ও হারিস ভুয়া নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করিয়েছেন বলে ২০২১ সালে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
ভাইয়ের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতার বিষয়ে আজিজ আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, “এখানে আমার কোনও ইনভলভমেন্ট ছিল না। আমার সেই ভাই ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশে ছিল না। আমি কিন্তু বিজিবিতে ছিলাম ২০১২ সালে, ডিসেম্বর থেকে। তার অনেক আগেই আমার ভাই বিদেশে চলে গেছে।
“তাহলে কীভাবে আমি আমার পদ-পদবি ব্যবহার করে ভাইকে বিদেশ গমনে সহায়তা করেছি, তা আমার বোধগম্য নয়। এটা অসত্য অভিযোগ আনা হয়েছে।”
তার ভাই হারিস এক দেশে চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে অন্য দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে সহযোগিতা করার কোনও সুযোগ ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
“আসলে কিন্তু সে চলে গিয়েছিল। যে অলরেডি বিদেশে, তার তো অন্য কোনও দেশে যাওয়ার জন্য আবার তো বাংলাদেশে আসার প্রয়োজন পড়ে না যে তাকে সহযোগিতা করব। আমি কোনও সহযোগিতা করিনি।”
সামরিক বাহিনীর কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগের জবাবে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, আল জাজিরার প্রতিবেদনেও একটা সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কেনার ক্ষেত্রে এই অভিযোগটি করা হয়েছিল।
কঙ্গোতে জাতিসংঘ মিশনের জন্য এই সিগন্যাল ইউনিট কেনা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ মিশন থেকে ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে এটি কেনার অনুরোধ করেছিল। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে তখন এটি ছিল না বলে কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এটি কেনার জন্য ২০১৭ সালের মার্চ মাসে আর্মি হেডকোয়ার্টার একটি বোর্ড অব অফিসার্স গঠন করে জানিয়ে আজিজ আহমেদ বলেন, তাদের সুপারিশের পর আর্মস ফোর্সেস ডিভিশন ২০১৮ এটা কেনার অনুমোদন দেয়।
“এই পারচেজের সব কিছু করে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তর। এটা আর্মি হেডকোয়ার্টার্সের আন্ডারে নয়, এটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। আমি সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করি ২০১৮ সালের ২৫ জুন, আর ডিজিডিপি কন্টাক্টরের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট সাইন করে ২৬ জুন। তাহলে আমার ইনভলভমেন্টটা কোথায়? আমার তো কোনও সম্পৃক্ততা নাই এবিষয়ে, যে আমার ভাইকে কোথাও কন্ট্রাক্ট দেব, আর ঘুষ নেব।”
“আমি চার বছর বিজিবিতে ডিজি ছিলাম। আমি চাইলে বিজিবিতে তাদের (ভাইদের) লাইসেন্স করিয়ে দিতে পারতাম না? খোঁজ নিয়ে দেখেন, একটা লাইসেন্স আছে কি না? সেনাপ্রধান ছিলাম তিন বছর। ডিজিডিপিতে খোঁজ নিয়ে দেখেন, একটাও লাইসেন্স কেউ দেখাতে পারবে কি না,” বলেন তিনি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর মিল দেখিয়ে আজিজ আহমেদ বলেন, “যে নাটক আল জাজিরা করেছিল, এখানে যে প্রশ্ন দুটি, তার সঙ্গে আমি লিংক দেখছি, একই ধরনের। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী উদ্দেশ্যে দিয়েছে, সে বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই। তবে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
“আমি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এমন কোনও কাজ করিনি, আবারও জোর দিয়ে বলছি, এমন কোনও কাজ করিনি, যার কারণে এমন নিষেধাজ্ঞা পেতে হবে।”
এই অভিযোগগুলোর প্রমাণ চেয়ে তিনি বলেন, “কোনও একটি প্রমাণ কেউ যদি দিতে পারে, তাহলে যে কোনও পরিণতি আমি মাথা পেতে নেব। আমি এমন কিছু করিনি যে আমাকে অনুশোচনা করতে হবে।”